ভারতে করোনার টিকা সনদে নরেন্দ্র মোদির ছবি কেন?

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বেশ জোরেশোরেই চলছে টিকাদান কার্যক্রম। আর টিকা নেওয়ার পরই দেওয়া হচ্ছে টিকা সনদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলাফেরায় এই টিকা সনদ হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। এই সনদ না দেখালে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন নিয়ম আর বিধিনিষেধের আবর্তে। তবে ভারতে এই টিকা সনদ নিয়ে এক অন্যরকম বিপত্তির দেখা দিয়েছে। কারণ এই সনদে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি।
টিকা সনদে মোদির ছবি নিয়ে এরই মধ্যে সমালোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ ছাড়া বিরোধী দলগুলো শাসিত কয়েকটি রাজ্যের নেতা টিকা সনদ থেকে মোদির ছবি সরিয়ে নিজেদের মুখ্যমন্ত্রীর ছবিও যুক্ত করেছেন।
এদিকে, টিকা কার্যক্রমকে ব্যক্তিগত প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘টিকা সনদে নরেন্দ্র মোদির ছবি থাকলে মৃত্যু সনদেও তাঁর ছবি থাকা উচিত।’
মমতা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘ধরুন, আমি আপনার সমর্থক নই এবং আপনাকে পছন্দ করি না, তাও আমাকে এটি বহন করতে হবে। মানুষের স্বাধীনতা কোথায়?’
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা এই টিকা সনদে টিকা নেওয়া ব্যক্তির তথ্য বিবরণের নিচে নরেন্দ্র মোদির ছবি ছাড়াও ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় দুটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার গত আগস্টে এ ব্যাপারে দাবি করেছেন, বৃহত্তর জনস্বার্থে টিকা সনদে এই ছবি (নরেন্দ্র মোদির ছবি) এবং বার্তা দুটি যুক্ত করা হয়েছে, যেন করোনার টিকা নেওয়ার পরও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।
এরই মধ্যে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার একটি আদালতে আগামী সপ্তাহে পিটার এম নামের এক তথ্য অধিকারকর্মী এবং কংগ্রেস পার্টির সদস্যের দায়ের করা পিটিশনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ৬২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি চান না যে, করোনার টিকা সনদে নরেন্দ্র মোদির ছবি থাকুক। এর ফলে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বেসরকারি হাসপাতালে করোনার টিকা নেওয়া পিটার এম বলেন, ‘আমি প্রতিটি ডোজের জন্য ৭৫০ রুপি খরচ করেছি। তাহলে আমার টিকা সনদে মোদির ছবি কেন থাকবে?’

এদিকে, কেরালার হাইকোর্ট ফেডারেল এবং রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে। এ ছাড়া মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুজন মুখপাত্রের কাছে পিটার এম-এর পিটিশনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
পিটার এম বিবিসিকে বলেন, ‘টিকা সনদে তাঁর (নরেন্দ্র মোদি) ছবি দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিষয়ে অনুপ্রবেশ করা হয়েছে। এটি অসাংবিধানিক। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, এই লজ্জাজনক কাজ অবিলম্বে বন্ধ করুন।’
পিটার এম আরও বলেন, “নরেন্দ্র মোদিই আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নন। এ ছাড়া এর আগেও দেশে টিকা কর্মসূচি করা হয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় এই টিকা কার্যক্রমকে কেবল ‘ওয়ান ম্যান শো’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।” এ ছাড়া, এই টিকা কার্যক্রমকে প্রধানমন্ত্রীর প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে, বিদেশে ভ্রমণকারী ভারতীয়দের জন্যেও মোদির ছবি সংবলিত টিকা সনদ সমস্যা তৈরি করছে বলে জানা গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভাইস নিউজ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যেসব দেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা নরেন্দ্র মোদির চেহারার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না, তাঁরা কয়েকজন ভারতীয় ভ্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন।