ভারত-চীন সীমান্তে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করল ভারতীয় সেনা

ভারত ও চীনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের আশায় আলোচনা চললেও যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না কেউই। সীমান্তে প্রতিদিনই চলছে উত্তেজনা। আর তাই লাদাখসহ চীন-ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করল ভারতীয় সেনা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে লাদাখের পাশাপাশি সিকিম, অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়েও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, চীনের সঙ্গে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের চারটি বিভিন্ন স্থানে সামনা সামনি যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এসব এলাকায় আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে ভারতীয় সেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিতর্কিত গালওয়ান উপত্যকায় প্রায় ১০০ তাবু গেড়েছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। এ ছাড়া ডেমচকের কাছাকাছি অঞ্চলেও সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে বেইজিং। চীনের সামরিক তৎপরতার জেরে ভারত-চীন সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লিও।
ভারত-চীন সীমান্তের পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত দেখতে গেলে চীন ভারতকে যে সীমান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে পারে, তা হলো গালওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং সো লেক, সিন্ধু নদীর উৎপত্তিস্থল, উত্তরাখণ্ড (কেদারনাথের উত্তর অংশে), সিকিম-ভুটান সংযোগস্থল, তাওয়াং উপত্যকা, সিয়াং উপত্যকা ও ওয়ালঙ। শেষের তিনটি অঞ্চল অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত।
অঞ্চলভিত্তিক অধিকারকে কেন্দ্র করে একাধিক জটিল ও বিতর্কিত বিষয়ের জেরে ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়েছে। চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় তৈরি হওয়া সমস্যা সেই দ্বন্দ্ব আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
এ অবস্থায় লাদাখের ভারত-চীন সীমান্তে আরো দুই হাজার জওয়ান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। জানা গেছে, লাদাখে পাঠানো হচ্ছে অতিরিক্ত দুই হাজার আইটিবিপি জওয়ান। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যেকোনো মুহূর্তে ফের ঘটতে পারে ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষের ঘটনা। যে কারণে দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দেশের সেনা।
২০১৭ সালের জুনে এক রাস্তা নিয়ে ভারত-চীনের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। মেরুগ লা থেকে ডোকলাম সংযোগকারী যে সড়ক চীনা সেনারা বানাচ্ছিল, তা সব ধরনের আবহাওয়া সইতে পারে। অর্থাৎ, সারা বছরই ডোকলামে সেনার যাতায়াত নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বেইজিং। ইয়াতুং থেকে জেলেপ লা পর্যন্ত একই ধরনের রাস্তা বানানোর চীনা পরিকল্পনাও তখন সামনে আসে। শুধু তাই নয়, ডোকলামকে কেন্দ্র করে গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত, হেলিপ্যাড, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব—এমন পরিখাও তৈরি করে চীন।
১৯৫০ সাল থেকে আকসাই চীন হলো ভারত ও চীনের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা। এ এলাকা প্রায় ৩৮ হাজার কিলোমিটার। ১৯৫৭ সালে চীন ওই এলাকা দখল করে। কিন্তু ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে, ওই এলাকা লাদাখের অংশ। ১৯৬২ সালে চীন আকসাই চীন বরাবর একটি রাস্তা তৈরি করে। যখন ভারত আকসাই চীনের অধিকারের দাবিতে অনড় থেকেছে, তখন চীনের তরফে গালওয়ান নদীর পশ্চিম এলাকাকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে। যা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত।