মুঠোফোনে আড়িপাতা হয়, ক্যামেরা প্লাস্টার করে দিয়েছি : পেগাসাস ইস্যুতে মমতা
‘গণতন্ত্রের পরিবর্তে গোয়েন্দাগিরি চলছে দেশে’—মুঠোফোনে আড়িপাতার সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ নিয়ে ভারত সরকারকে এভাবেই দায়ী করলেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের মুঠোফোনের ক্যামেরা ‘প্লাস্টার’ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করলেন তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী। বক্তৃতার মঞ্চে দেখালেন নিজের মুঠোফোনটিও। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এ খবর জানিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের ফোন ট্যাপ হয়েছে। এটা (মুঠোফোন) এখন রেকর্ডার। পেগাসাস ডেঞ্জারাস, ফেরোশাস। শান্তিপূর্ণভাবে লোককে থাকতে দিচ্ছে না। দেশে স্বৈরাচার(তন্ত্র) চলছে।’
ফোনে আড়িপাতার জন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না বলেও দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমি চিদম্বরমজির (ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম) সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। শরদ পাওয়ারজির (ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রধান এবং রাজ্যসভার সাংসদ শরদ পাওয়ার) সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কথা বলতে পারছি না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে পারি না। কেন? পেগাসাস কী জানেন? গরিবদের টাকা দেওয়ার পরিবর্তে প্রচুর টাকা খরচ করছেন গোয়েন্দাগিরিতে। স্পাইং, বিটিং, কিলিং অ্যান্ড টকিং টু মাচ ডুয়িং নাথিং।’
সাধারণ মানুষের করের টাকা আড়িপাতায় খরচ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘পেগাসাসের নামে আমার, আপনার, সবার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। আপনি বাড়িতে কখন ঘুমোচ্ছেন, কী খাচ্ছেন—সেটাও ফোনে দেখা যাবে। আপনার ব্রেনটাও স্ক্যান করে নিচ্ছে। দুই মাসে ৪৭ বার বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। পেট্রোল, ডিজেল থেকে কর বাবদ তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে ভারত সরকার। কোথায় এই টাকা খরচ করছে? লোকে ওষুধ, টিকা পাচ্ছে না। কোথায় পিএম কেয়ার ফান্ডের টাকা? কে হিসাব রাখছে?’
‘ফোন হ্যাকিং’ রুখতে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা-ও জানান তৃণমূলনেত্রী। নিজের ফোন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একটা জিনিস করেছি। ফোনটা প্লাস্টার করে দিয়েছি। ফোন রেখে কী করব? ক্যামেরায় সব তুলে নেয়। অডিও, ফেসটাইম, ভিডিও করলে উঠে যায়। ক্যামেরায় প্লাস্টার লাগিয়ে দিয়েছি।’
এরপরই একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রীর আগামীর বার্তা, ‘ভারত সরকারকেও প্লাস্টার লাগানো উচিত। নইলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ কাউকে ভরসা করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ফোনও ট্যাপ হচ্ছে। মন্ত্রীদের ফোনে ঢুকে গেছে পেগাসাস। সব নেতা ও বিচারপতিদের ফোনে পেগাসাস। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত। বিজেপি গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভ—নির্বাচন, মিডিয়া ও বিচারব্যবস্থা। পেগাসাস নির্বাচনি প্রক্রিয়া, বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক নেতা এবং মিডিয়া হাউসকে দখল করেছে। সব প্রতিষ্ঠানকে ওদের কথা শুনতে হবে। নইলে ওরা ব্ল্যাকমেইল করবে। গণতন্ত্রের বদলে দেশে গোয়েন্দাগিরি চলছে। সবার মুখ বন্ধ। আজ আমাদের একাট্টা হওয়া উচিত। ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে দেশকে বাঁচাতে হবে। একটাই স্বার্থ—দেশকে বাঁচানো। জনতাকে বাঁচানো।’