রাশিয়ার ‘সেনা অভিযানের’ প্রথম দিনে ইউক্রেনে ১৩৭ জন নিহত : জেলেনস্কি
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/25/ukraines_president_photo.jpg)
রাশিয়ার ‘সেনা অভিযানের’ প্রথম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার মোট ১৩৭ জন ইউক্রেনীয় নাগরিক নিহত হয়েছে বলে এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
জেলেনস্কি আরও জানান, রাশিয়ার এমন বড় ধরনের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৩১৬ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা ১৩৭ জন বীর, আমাদের নাগরিক, সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের হারিয়েছি।’ এ ছাড়া আরও ৩১৬ জন মানুষ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/25/ukraines_president_inside.jpg 687w)
এদিকে, সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ সময় গতকাল রাত পর্যন্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ২০৩টি হামলা চালায় রুশ সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে ইউক্রেনের ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ও ১১টি বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আরআইএ নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে এ তথ্য।
দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর বৃহস্পতিবার দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পুতিনের ভাষণ প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও অন্যান্য বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার।
এরই মধ্যে কিয়েভেও ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে গ্র্যাড মিসাইল ছুড়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সৈন্যরা।
কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তন জেরাশেঙ্কো বলেছেন, কিয়েভ, খারকভ এবং নিপারের কাছে সামরিক সদর দপ্তর, বিমানবন্দর, সামরিক অস্ত্রাগারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
পুতিনের নির্দেশের পর ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ সামরিক বাহিনী। রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির একাধিক স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে। পাল্টা আঘাত হানার দাবি করেছে ইউক্রেনও। রাশিয়ার ছয়টি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করছে দেশটি।
এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দেশটির শাচিসতিয়া শহরে হামলা করে। হামলা প্রতিহত করার সময় প্রায় ৫০ জন ‘দখলদার রুশ’ নিহত হয়েছেন। শাচিসতিয়া এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণে আছে বলে এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান।
বৃহস্পতিবার পুতিনের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর রুশ পদাতিক বাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ঢুকছে বলে দাবি করেছিল ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ট্যাংকসহ ভারী সামরিক যান নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে রাশিয়ার সেনারা হামলা করছেন বলেও দাবি করা হয়। প্রাণভয়ে কিয়েভের বাসিন্দারা হন্যে হয়ে আশ্রয় খুঁজছেন।
এদিকে, রুশ বাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষায় প্রস্তুত নাগরিকদের যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যারা যারা অস্ত্র চাইবে, তাদের তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরার।
বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশ একই মহাদেশের অন্য দেশে এত বড় আক্রমণ চালায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জেলেনস্কি রাশিয়ানদের প্রতিও ‘সামনে এগিয়ে আসতে’ এবং যুদ্ধের বিরোধিতা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।