হাসপাতাল ও চিকিৎসক ছাড়াই করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে যে গ্রাম

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত পুরো ভারত। দেশটিতে আগের দিনগুলোর তুলনায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও আজ মঙ্গলবার আগের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৮৭৬ জনের।
জনবহুল ও প্রধান শহরগুলোর পাশাপাশি নভেল করোনা থাবা বসিয়েছে দেশটির প্রত্যন্ত এলাকায়ও। এর মধ্যে গুজরাট রাজ্যের ভাবানগর জেলার চোগাথ গ্রাম অন্যতম। করোনার সংক্রমণ রোধে চোগাথ গ্রামে এখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি উল্লেখ করার মতো চিকিৎসা সহায়তা। স্থানীয় ফার্মাসিস্ট জিতু ওই গ্রামের একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রত্যন্ত এলাকাটিতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
২০১১ সালের তথ্য অনুসারে, চোগাথ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের একটি কৃষিভিত্তিক গ্রাম এবং সেখানে প্রায় সাত হাজার ৪০০ জন লোকের বসতি। চলতি সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জিতু বলেন, এই গ্রামে ৫০০ থেকে ৬০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া অনেকের উপসর্গ রয়েছে।
জিতু জানান, এই গ্রামে একজনও চিকিৎসক অথবা ওষুধ নেই এবং নিকটতম শহরটি এক ঘণ্টারও বেশি দূরে। প্রতিবেশী শহরগুলোতে কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে তবে এই ছোট ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় শয্যা নেই।
করোনার এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ফার্মাসিস্ট জিতু স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন এবং ফার্মাসিস্ট হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
‘এখানে কেউ নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, চিকিৎসক নেই, নার্স নেই,’ জিতু বলেন, ‘এই গ্রামে কোনো সুবিধা নেই। সুতরাং আমি যেভাবে উচিত মনে করছি, সেভাবে এটি মোকাবিলা করেছি।’
চোগাথ গ্রামে চিকিৎসা সহায়তা না পেয়ে হতাশ গ্রামবাসী হাসপাতালের একটি শয্যা পাওয়ার আশায় আশেপাশের শহরগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

চোগাথের বাসিন্দা দীনেশ মাকওয়ানা জানান, তিনি তাঁর কোভিড-পজিটিভ বাবাকে গুজরাটের শহরের চারটি আলাদা হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালগুলোর সব শয্যাই পূর্ণ ছিল। গুরুতর অবস্থায় বাবাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাঁর।
‘আমরা (দ্বিতীয় তরঙ্গ দ্বারা) খুব হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম,’ তিনি বলছিলেন, ‘পুরো গ্রামটি খুব শোকাহত, সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’
দীনেশ মাকওয়ানা জানান, কোভিডে মারা গেছেন এমন অনেক গ্রামবাসীকেই তিনি চেনেন। ‘আমি ভয় পেয়েছিলাম,’ তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম বাবা মারা যাবেন।’
গ্রামের ‘জিতু ভাই’ অথবা ‘ভাই জিতু’ নামে পরিচিত—এমন কিছু ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তাঁর বাবার অবস্থা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছিল। তবে পরিবারের ঝামেলা শেষ হয়নি, মাকওয়ানার বোন ও মাও এখন আক্রান্ত আছেন।
‘আমি আমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন,’ বলেন মাকওয়ানার বাবা জীবনরাজ। ‘আমি মারা গেলে পরিবারটি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তিত, তবে আমি মৃত্যুর ভয় করি না।’
‘এখানে কেউ আসে বা যায় না,’ বলেন জীবনরাজ।
এ ছাড়া চোগাথের ৭০ বছর বয়সী বাসিন্দা গির্জশঙ্কর শ্মশানে মরদেহ দাহ করতে সহায়তা করছেন। তিনি মাঠ থেকে কাটা কাঠ দিয়ে ট্রাক্টর পূর্ণ করে গ্রামে নিয়ে আসেন এবং শ্মশানে আসা মরদেহ দাহ করার কাজ করেন।
সাধারণত, গ্রামটিতে বছরে প্রায় ৩০ জন মারা যায়। তবে গত এক মাসে ৯০টি মরদেহ দাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গির্জশঙ্কর।