৫০টির বেশি খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’, ধরা পড়ল দিল্লির চিকিৎসক

সাল ২০০২ থেকে ২০০৪। এ দুই বছরে এক খুনির খোঁজে ভারতের দিল্লি পুলিশের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। দুই বছরে ৫০টির বেশি খুন। তাও আবার একই কায়দায়। খুনি বা খুনের পরিকল্পনাকারী যে একজনই, পুলিশের কাছে তা ছিল পানির মতো পরিষ্কার। কখনো খুনির শিকার ট্রাকচালক। কখনো বা ট্যাক্সি ড্রাইভার। কখনো আবার অন্য কেউ। দিল্লির নির্জন রাস্তা হয়ে ওঠে আতঙ্কের এক নাম। তত দিনে ওই সিরিয়াল কিলার বা খুনের মাস্টারমাইন্ডের অপরাধের সীমানা ছড়িয়েছে দিল্লি ও শহরতলি ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতেও। শেষ পর্যন্ত খুনের ধরনই ধরিয়ে দেয় সেই খুনিকে। পুলিশ জানতে পারে ‘খুনি’ একজন আয়ুর্বেদ চিকিত্সক। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
দেবেন্দ্র শর্মা। বয়স ৬২। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একটা ডিগ্রিও তারা আছে। কিন্তু, আয়ুর্বেদের ডিগ্রির আড়ালে অপরাধে হাত পাকিয়েছে দেবেন্দ্র শর্মা। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আলিগড় জেলার পুরেনি গ্রাম থেকে তাকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু, একটি খুনের মামলায় প্যারোলে ছাড়া পেয়ে ছয় মাসের জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিল সে।
এমন এক কুখ্যাত 'সিরিয়াল কিলার' গত জানুয়ারিতে ফেরারি হওয়ার পর, লাগাতার ছয় মাসের চেষ্টায় দিল্লির বাপরোলা এলাকা থেকে ওই তাকে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুধু খুন নয়, অপহরণেও হাত পাকিয়েছিল দেবেন্দ্র শর্মা। খুনের পাশাপাশি দেবেন্দ্রর নামে একাধিক অপহরণের মামলাও রয়েছে। তারও আগে উত্তরপ্রদেশে ভুয়া গ্যাস এজেন্সি খুলে দুবার ধরা পড়েছিল সে। এরপর আন্তঃরাজ্য অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০০৪ সালে দেবেন্দ্র শর্মাকে জেলে যেতে হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত অন্তত ১২৫টি অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনের সঙ্গে দেবেন্দ্রর নাম জুড়ে আছে। এই একেকটি কেসে দেবেন্দ্র শর্মা পেত পাঁচ থেকে সাত লাখ রুপি।
এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেবেন্দ্র শর্মার নাম জড়িত থাকলেও পুলিশের দাবি, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থান মিলিয়ে সংখ্যাটা একশোর কম নয়। নিজের মুখে দেবেন্দ্র শর্মা স্বীকার করেছে, ৫০টি হত্যাকাণ্ডের পর হিসাব রাখা ছেড়ে দিয়েছে সে।
দিল্লি পুলিশ জানায়, আগে দেবেন্দ্র শর্মা মোহন গার্ডেনের একটি বাড়িতে ছিল। সেখান থেকে বাপরোলা এলাকায় গিয়ে এক বিধবাকে বিয়ে করে সম্পত্তির ব্যবসায় নামে দেবেন্দ্র শর্মা।
জানা যায়, বিহারের সিওয়ান থেকে ‘ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদ, মেডিসিন ও সার্জারি’তে ডিগ্রি নিয়ে, ১৯৮৪ সালে জয়পুরে একটি ক্লিনিক খুলেছিল দেবেন্দ্র শর্মা। ১৯৯২ সালে গ্যাস ডিলারশিপ প্রকল্পে ১১ লাখ রুপি বিনিয়োগ করে ভরাডুবি হয় তার। চরম আর্থিক সংকটে পড়ে প্রতারণা শুরু করে দেবেন্দ্র শর্মা। আলিগড়ের ছারা গ্রামে ভুয়া এজেন্সি খুলে শুরু হয় তার প্রতারণা। ক্রমে অপরাধের জগতে তার শিকড় ছড়িয়ে যায়।