রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা যাবে না

মিয়ানমারের গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা যাবে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)।কয়েক দিন ধরে একই দাবি করে আসছে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ (এনএইচআরসি) বেশ কয়েকটি সংস্থা।
ওয়ান ইন্ডয়া জানায়, রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বের করে দেওয়া বিষয়ে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয়, তারা অবৈধ অভিবাসী। একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে ভারত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়া কোনো অহংকার বা বোঝাপড়ার বিষয় নয়, বরং এটি ভারতের একটি নীতি।
ইউএনএইচসিআর বলছে, রোহিঙ্গারা নিজের দেশে অনিরাপদ মনে করলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের ভারতে রাখতে বাধ্য দেশটির সরকার। কোনোভাবেই তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।
ইউএনএইচসিআরের নয়াদিল্লি সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, সব দেশ শরণার্থীদের রাখতে পারবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী। যারা শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে বা করেনি সবাইকে এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।
বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীদের দাবির উত্তরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যখন মিয়ানমারের কোনো সমস্যা নেই, কিছু মানুষ কেন তাদের ভারত ত্যাগের বিপক্ষে যাচ্ছে।’
তবে গত সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে দেওয়া একটি লিখিত বক্তব্যে (এফিডেভিট) জানায়, রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ শাকির নামের দুই নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের বের করে দেওয়া হবে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আবেদনের জবাবে আদালতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে কেন্দ্রীয় সরকার।
এ বিষয়ে পরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন।
লিখিত বক্তব্যে ভারত সরকার বলে, ‘দেশে অভ্যন্তরে বসবাস ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ কেবল নাগরিকদের রয়েছে, অবৈধ শরণার্থীদের এ অধিকার নেই।’ সরকারের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ নয়।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ঘোষণা দিয়েছেন, মামলাটির ব্যাপারে আগামী ৩ অক্টোবর আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে আইনি অবস্থান দেখতে চাই। আদালতের এখতিয়ার কী এবং আমরা কী সিদ্ধান্ত দিতে পারি।’
দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ভারতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, সমষ্টিগতভাবে ভারত রোহিঙ্গাদের বহিষ্কার করতে পারে না। তাদের এমন জায়গায় ফেরত পাঠাতে পারে না যেখানে নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে ৪৩ হাজার। আর ইউএনএইচসিআরের মতে ভারতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে ১৬ হাজার ৫০০। নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বিগত তিন সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নিধন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। জাতিসংঘও একই আহ্বান জানিয়েছে।