যমুনা ও কুশিয়ারা নিয়ে ভারতের আগ্রহের কারণ

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শিলিগুঁড়ি করিডরের ওপর চাপ কমাতে চায় ভারত। বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ওই যোগাযোগ বাড়ানো ও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের যমুনা ও কুশিয়ারা নদীতে খনন কাজের ৮০ শতাংশ ব্যয় করবে ভারত। আগামী বছরের শুরুর দিকে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। আজ রোববার প্রকাশিত শান্তনু নন্দন শর্মার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চিকেন নেক’ নামের শিলিগুঁড়ি করিডরের ওপর দ্রুতই চাপ কমিয়ে আনতে চায় ভারত। এর পেছনে কাজ করছে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্বও। চীনের কারণেই ওই পথ ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে ভারত। আর এরই জন্য বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ দ্রুততম ও সহজ করতে চায় দেশটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দুই নদীপথে খননকাজ করার ব্যাপারে দুই দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দুটি নদীপথের ৪৭০ কিলোমিটার খনন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩০৫ কোটি রুপি। যার ২৪৪ কোটি রুপিই দেবে ভারত। চলতি বছরের শেষ দিকে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের প্রতিষ্ঠানও অংশ নেবে।
যমুনা নদীতে সিরাজগঞ্জ থেকে লালমনিরহাটের দইখাওয়া পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে সিলেটে জকিগঞ্জ পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীতে ২৯৫ কিলোমিটার পথ খনন করা হবে। ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করে যমুনা নাম ধারণ করেছে। অন্যদিকে আসামের বারাক নদীর শাখা হয়ে বাংলাদেশে এসেছে কুশিয়ারা নদী।
বিকল্প পথের সন্ধানে
বাংলাদেশের ওই দুই নদীপথে খনন বা নাব্যতা ধরে রাখার ব্যাপারে ভারতের আগ্রহ কেন তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন ওই প্রতিবেদক। সেখানে বলা হয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভারতের একমাত্র অবলম্বন শিলিগুঁড়ি করিডোর। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ওই এলাকার একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে নেপাল। ভৌগোলিকভাবে করিডোরটি দেখতে মুরগির ঘাড়ের মতো। তাই একে ‘চিকেনস নেক’ নামেও ডাকা হয়। ওই সরুপথটির বিকল্প চাইছে ভারত।
ডোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা কমে গেলেও এর রেশ শেষ হয়ে যায়নি। চীনের চুমবি উপত্যকায় অবস্থান করছে দেশটির এক হাজারের মতো সেনা। আর ওই চুমবি উপত্যকার অবস্থান শিলিগুঁড়ি করিডোরের কাছেই। কৌশলগত কারণে ওই পথ দিয়ে পণ্য, সেনাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাইছে না ভারত। এরই কারণে বিকল্প পথের সন্ধান।
২০২০ সালের মাঝামাঝি ওই খনন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তা শেষ হলে ভারতের বারানসি থেকে দেশটির জাতীয় জলপথ ১, ২ ও ১৬ তে আসা যাওয়া একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। গঙ্গা, ভাগীরথী ও হুগলি নিয়ে গঠিত ভারতের জাতীয় জলপথ ১। আসাম রাজ্যের ব্রহ্মপুত্রের নদীপথ নিয়ে গঠিত জাতীয় জলপথ ২ এবং আসামে কাছাড় জেলায় বারাক নদীতে লখিপুর থেকে ভাঙাবাজার পর্যন্ত নদীপথ নিয়ে গঠিত জাতীয় জলপথ ১৬।
বাংলাদেশের যমুনা ও কুশিয়ারার ওই নদীপথে খনন কাজ শেষ হলে শিলিগুঁড়ি করিডোর ছাড়াই দুই নদীপথের মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ করতে পারবে ভারত। বরং নদীপথকেই ঝুঁকিমুক্ত বলে মনে করছে দেশটি।
কমে আসবে ব্যয়
শিলিগুঁড়ি করিডোর দিয়ে অর্থাৎ সড়ক পথ দিয়ে দুই হাজার টন পণ্য নিতে প্রয়োজন ২০০ ট্রাক। সেখানে একটি নৌযান দিয়েই নৌপথে ওই পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে ভারতের ব্যয়ের পরিমাণও কমে আসবে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সান্যাল বলেন, ‘ব্রিটিশরা ওই নদীপথেই পণ্য পরিবহন করে সমুদ্র বন্দরে নিয়ে যেত। কিন্তু নদীপথ সীমিত হওয়ার কারণে তা হয়নি। বাংলাদেশের নদীপথে খনন ও নাব্যতা তা পুনরায় চালু করবে।’
ভারতের মহাসড়ক, সড়ক পরিবহন ও নৌ চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী নিতীন গাড়করি বলেন, ‘বাংলাদেশে নৌপথে খনন হলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে।’ তবে মন্ত্রী এর কৌশলগত দিক নিয়ে কিছু বলেননি।