তৃণমূলের কংগ্রেস ছাড়লেন মুকুল রায়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙনের আশঙ্কা জাগিয়ে তৃণমূল থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন একসময়কার তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তৃণমূলে মুকুল রায়ই ছিলেন প্রথম থেকে অন্যতম নেতৃত্ব। সেই মুকুল রায়ই এবার তৃণমূল ছাড়লেন।
বুধবার বিকেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ পদ এবং তৃণমূলের প্রাথমিক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মুকুল রায়। রাজধানী নয়াদিল্লিতে উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর বাসভবনে গিয়ে তিনি তাঁর ইস্তফাপত্র জমা দেন। ওই ইস্তফাপত্রে মুকুল রায় লেখেন, ‘হৃদয়ে গভীর যন্ত্রণা নিয়েই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলাম।’
স্মৃতি রোমন্থন করে মুকুল রায় বলেন, ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। সেখানে প্রথম সই করেছিলাম। ওই বছরই ২৪ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কংগ্রেস থেকে বিতাড়ন করা হয়। তারপর মমতা এসে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনিই প্রথম কমিশনকে মমতার যোগদানের কথা জানান। তবে সে সবই আজ ইতিহাস। এরপর ১৯৯৮ সালে তৃণমূল আসন সমঝোতার জন্য বিজেপির হাত ধরে। মমতা সেই সময় এনডিএ জোটের রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেদিন তৃণমূল বলেছিল বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত এনডিএ ও বিজেপির সঙ্গে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর ইউপিএ সরকারে যোগ দেয় তৃণমূল। কিন্তু টুজি ও কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারির জেরে ২০১২ সালে ইউপিএ ত্যাগ করে তৃণমূল। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তৃণমূল।
মুকুল রায় বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে লড়তেই তৃণমূলের জন্ম হয়েছিল। তথাপি বারবার কংগ্রেসের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে তৃণমূল।
মুকুল রায় এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘মমতাকে নেত্রী মনে করি। কমরেড হতে পারি। তাই বলে চাকর নই।’
তবে মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়লেও এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বলেও জানিয়ে দেন। যদিও মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলে ভারতের রাজনীতিতে এরই মধ্যে খবর চাউর হয়েছে। মুকুল রায় আরো বলেন, অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়েছে এবং হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনই নয়।
এদিন মুকুল রায় ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কেন্দ্রের মোদি সরকারের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ভারতের মানুষ মোদিকে ভোট দিয়ে ভুল করেননি। এদিকে মুকুল রায় এদিন তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলে ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক মহল। কারণ, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই একমাত্র মুকুল রায়ের গ্রহণযোগ্যতা ছিল কর্মীদের কাছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে দাঁড়িয়ে রাজ্যে মুকুল অনুগামীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মুকুল অনুগামীরা তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায়ের দেখানো রাজনৈতিক পথের আশায় প্রহর গুনছেন।