রোহিঙ্গা বিষয় আদালত নয়, সরকারকে সামলাতে দেওয়া উচিত

রোহিঙ্গাদের ভারতে অবস্থানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অন্তবর্তীকালীন এক পর্যবেক্ষণের জবাবে ইস্যুটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অশোক প্রসাদ এ আহ্বান জানান।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে অশোক প্রসাদ জানান, ভারতের জনসংখ্যাবিষয়ক পরিবর্তন ও এমন ধরনের প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক বিষয়গুলো সরকারকেই সামলাতে দেওয়া উচিত।
এর আগে ভারতে রোহিঙ্গাদের অবস্থান সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি শেষে এক অলিখিত অন্তবর্তীকালীন পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ‘সরকার মানবিক বিবেচনাগুলো এড়িয়ে যেতে পারে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। প্রয়োজনমতো অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আগামী ২১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে। এই সময় বিষয় বিবেচনায় রাষ্ট্র বা রোহিঙ্গা পক্ষ যে কেউ আদালতে হাজির হতে পারবেন বলেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এ দিন শুনানিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এর আগে সর্বোচ্চ এই আদালতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ভারতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। বলা হয়, ভারতে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক বিবেচনার পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীর ভারতে অবস্থানের ফলে সরকারের বিভিন্ন শঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রাখা হবে।
ভারতে অবস্থানকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গা দেশটির নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি উল্লেখ করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে বিভিন্ন সংস্থা আপত্তির মুখে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আদালতে আবেদন করেন দুই রোহিঙ্গা। তাঁরা জানান, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে বাধ্য হয়েই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারতে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের বিষয়ে চুড়ান্ত রায় আসার আগে এমন নির্দেশে বেশ স্বস্তি পাচ্ছেন আবেদনকারী দুই রোহিঙ্গা। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই ধরনের নির্দেশের বিরোধিতা করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। আগামী ২১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছে। এদের মধ্যে ১৬ হাজার রোহিঙ্গা জাতিসংঘের নথিভুক্ত শরণার্থী। সেখানে তাঁরা নানা প্রতিকূলতা ও চরম দরিদ্রতার মধ্যেই বসবাস করছেন।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে ফের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণ শুরু করলে পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গা আসছে বাংলাদেশে।
কিন্তু ভারত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। সীমান্তে তারা রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে। উপরন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী আদালতের দ্বারস্থ হন। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদালতকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশে চলমান রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেয় ভারত।
এ দিকে বিভিন্ন সীমান্তপথ দিয়ে ভারতের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশইন করার অভিযোগ উঠেছে। গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৫৭ রোহিঙ্গা সদস্যকে সীমান্ত দিয়ে সাতক্ষীরায় পুশইন করা হয়েছে।