দেড় মাস ঘুরে মিলল কাঙ্ক্ষিত হাসপাতাল, অস্ত্রোপচার হলো শিশুটির

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে আদিবাসীদের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের আট বছর বয়সী মেয়েশিশু রাবিতা। ২৫ ফুট উঁচু একটি গাছ থেকে পড়ে মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল তার। এর পর গ্রাম থেকে শিশুটিকে নিয়ে দেড় মাস ধরে একটার পর একটা হাসপাতালে ঘুরেছেন তার মা-বাবা। কিন্তু কোথাও হচ্ছিল না চিকিৎসা। অবশেষে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ঠাঁই হয়েছে শিশুটির।
পঙ্গু শিশুকে নিয়ে মা-বাবার এই অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির প্রতিবেদক ময়ুরেশ কন্নুর। তিনি জানান, মেয়ে রাবিতা গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় গবাদি পশু চড়াচ্ছিলেন রাজা ও শান্তি ওয়ালভি। এর পর শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালযাত্রা শুরু হয় তাঁদের।
আদিবাসী কৃষক এই দম্পতি শুধু স্থানীয় বিল ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁরা পড়ালেখা জানেন না। আর এ কারণে শিশুটি কবে আঘাত পেয়েছিল, তা শুরুতে হাসপাতালকে জানাতে পারেননি দুজনের কেউই।
তবে একটি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশুটি আঘাত পেয়েছিল সেপ্টেম্বরের শুরুতে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, রাবিতার মা-বাবা দেড় মাস পর একটি হাসপাতাল পেয়েছেন, যেটি তার ভাঙা মেরুদণ্ডের চিকিৎসা শুরু করে।
মহারাষ্ট্রের নানদুরবার জেলায় সাতপুরা পাহাড়ের পাদদেশে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস ওয়ালভি দম্পতির। এই জেলাটির বেশির ভাগ অংশে এখনো রেল কিংবা সড়ক যোগাযোগ নেই।
দুর্ঘটনার পর এই দম্পতি কয়েক টুকরা বাঁশের ওপর একটি কম্বল বিছিয়ে তাঁদের মেয়েকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালের সন্ধানে। ভারতে যেসব অঞ্চলে হাসপাতালে যাওয়ার একমাত্র উপায় হেঁটে রওনা দেওয়া, সেগুলোতে এই পদ্ধতিতেই রোগীদের নিয়ে যাতায়াত করা হয়।
শুরুতে প্রায় আধা ঘণ্টা হেঁটে একটি ট্যাক্সিতে ওঠেন ওয়ালভি দম্পতি। সেটিতে করে বাড়ি থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে নিকটবর্তী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে যান মেয়েকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা তাঁদের বলেন, রাবিতাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এর পর বাঁশের খাটিয়ায় করে মেয়েকে নিয়ে আরো ৮০ মাইল পথ পাড়ি দিলেন এই দম্পতি।
এভাবে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ঘুরে চারটি হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে যান ওয়ালভি দম্পতি। কিন্তু কোনোটাতেই হচ্ছিল না চিকিৎসা। অবশেষে মুম্বাইয়ের সরকারি গোকুলদাস তেজপাল (জিটি) হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করাতে সক্ষম হন তাঁরা। সেখানে গত ৩ নভেম্বর অস্ত্রোপচার করা হয় মেয়েটির।
রাবিতার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে ওই হাসপাতালের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুকুন্দ তায়াদে বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই সম্পূর্ণ আরোগ্য কামনা করতে পারি না।’
‘তবে ফিজিওথেরাপিতে সুস্থ হয়ে উঠবে সে’, যোগ করেন মুকুন্দ।