ভারতে বসে ঢাকার ব্লগার খুনের ছক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা স্টেশন থেকে তিন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের জিজ্ঞসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের মধ্যে দুজনকে বাংলাদেশি বলে জানানো হয়। আরেকজন পশ্চিমবঙ্গের অস্ত্র ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে স্পেশাল টাক্সফোর্স (এসটিএফ)।
তাঁরা হলেন শামসাদ মিয়া ওরফে তানভীর ওরফে সইফুল ওরফে তুষার, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ও জিয়ারুল আলী। জিয়ারুল আলী প্রথম নিজেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের বাসিন্দা মনতোষ দে বলে পরিচয় দিয়েছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) দেওয়া তথ্যের ওপর ভর করে গত মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতার এসটিএফ। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, দুই বাংলাদেশি ভারতে বসে ঢাকায় একজন ব্লগারকে খুন করার ছক কষেছিল। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য এবং তাদের নেতা মেজর জিয়া। ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান এবং অনন্ত বিজয় দাসকে খুনের অভিযোগ রয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলার টিমের বিরুদ্ধে।
এসটিএফের ডিসি মুরলিধর শর্মা গণমাধ্যমকে জানান, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র এবং বনেদি ঘরের ছেলে শামসাদের মগজ ধোলাই করেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মেজর জিয়া। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সিলেটে পড়ার সময় জনৈক মামুনের সঙ্গে আলাপ হয় শামসাদের। এই মামুনের হাতেই শামসাদের জিহাদের শিক্ষা। মামুনকে বাংলাদেশ পুলিশ আগেই গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার ছক কষার পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনাও করেছিল বলে দাবি করেন এসটিএফ কর্মকর্তা।
গতকাল বুধবার দুই বাংলাদেশি ও বসিরহাটের অস্ত্র ব্যবসায়ীকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হলে মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যঅর্ণব ঘোষাল তাঁদের ১৪ দিনের, অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসটিএফ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এসটিএফের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে দুই বাংলাদেশি স্বীকার করেছেন, তাঁরা ঢাকায় ব্লগার হত্যার ছক কষছিলেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা তাঁদের একাধিক সহকর্মীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন শামসাদ ও রিয়াজুল। পরে তাঁরা কলকাতা থেকে চলে যান হায়দরাবাদে। সেখানে কসাইখানায় কাজ নেন। উদ্দেশ্য ছিল, হায়দরাবাদে কর্মরত বাংলাদেশিদের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা। হায়দরাবাদে একটি কম্পিউটার কোর্স করেন জঙ্গি শামসাদ। তারপর তাঁরা দুজনে চলে যান কর্ণাটকের বেলগামে। সেখানে ভারতীয় জাল আধার কার্ড বানান তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা যান পুনেতে। এরপর ফিরে আসেন কলকাতায়।
এসটিএফের দাবি, কলকাতায় কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথাও হয় দুজনের। কিন্তু ওয়ান শাটারের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র কেউ দিতে না পারায় তাঁরা আরো খোঁজ চালাচ্ছিলেন। এর পরেই বসিরহাটের মনতোষ ওরফে জিয়ারুল আলীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়।