নেপাল-ভারতে বাড়ছে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি

নেপালের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। সম্প্রতি এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। আর নেপাল ও ভারতের ওই অঞ্চলগুলোতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও।
সম্প্রতি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এপ্রিলে নেপালে ঘটা বড় ভূমিকম্পে পূর্ণ শক্তি প্রকাশ ঘটেনি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে যে আলোড়ন হয়েছিল এর কিছুটা পশ্চিম দিকে চলে যায়।
যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক নেপালে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরে ভূমিকম্পের শঙ্কা নিয়ে গবেষণা করেন। এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ন্যাচারাল জিওসায়েন্স’ ও ‘সায়েন্স’। গবেষকরা মনে করেন, নেপালের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের ওপর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের গবেষক জেন-ফিলিপ অ্যাভোয়াক বিবিসিকে বলেন, নেপালের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই অঞ্চল বেশ জনবহুল তাই বড় মাপের ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এতে প্রায় নয় হাজার প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া লাখো মানুষ আহত হয় ও ঘরবাড়ি হারায়।
ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট উত্তর দিকে ইউরেশিয়া প্লেটের দিকে সরছে। টেকটনিক প্লেটের সরে যাওয়ার হার বছরে দুই সেন্টিমিটার। এই সরে যাওয়ার কারণেই নেপালের ওই ভূমিকম্প ঘটে। তবে গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বড় কোনো ভূমিকম্পের আভাস দেন। কয়েক দশক ধরে নেপালের রাজধানীর কাছের মেইন হিমালয়ান থ্রাস্ট ফলট নামক ফল্ট লাইনে চাপ তৈরি হয়। ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট উত্তর দিকে ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে ঘর্ষণের কারণে এই চাপ তৈরির কারণ। আর এটি যা শুধু শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাধ্যমেই প্রকাশ সম্ভব ছিল, তাই ঘটেছিল নেপালে।
তবে এপ্রিলের ২৫ তারিখের ভূমিকম্পে পুঞ্জীভূত চাপ সবটুকুই খরচ হয়নি। গবেষক অ্যাভোয়াক বলেন, দুই প্লেটের ঘর্ষণে সৃষ্ট চাপ পুরোটা প্রকাশ পেলে এপ্রিলের ভূমিকম্প আরো বড় মাত্রার হতো। তিনি বলেন, চাপের কিছুটা পশ্চিম দিকে সরে গেছে। নেপালের উত্তরে পোখারা ও ভারতের দিল্লির উত্তরদিকে এই চাপ সরেছে।
গবেষকরা জানান, অনেক দিন ধরেই নেপাল ও ভারতে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরে যাওয়া চাপ এই আশঙ্কাকৃত ভূমকম্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সর্বশেষ ১৫০৫ সালে নেপাল ও ভারতের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
গবেষকরা বাড়তি পযবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিলেও ভূমিকম্প সময় নিয়ে কোনো তথ্য দেননি। অবশ্য ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনক্ষণ সঠিকভাবে বলা সম্ভবও নয়।
গবেষকরা বলেন, মানুষকে ভয় পাওয়ানো তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তবে নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে সচেতন করতে হবে।