ফাঁসিতে ঝুললেন মা, কাঁদতে কাঁদতে দেখল শিশু

‘মা তো নিজেই দড়ি নিয়ে নিল। বারবার বারণ করছিলাম, এমন কোরো না। মা শুনল না’- আধো আধো বুলিতে এভাবেই পুলিশকে মায়ের আত্মহত্যার ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিল চার বছর বয়সের শিশু।
কোলের অবুঝ সন্তানের সামনে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন ভারতের কলকাতা শহরের সোনালি হালদার (২৪)। এ সময় অঝোরে দুচোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না শিশুটির।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে শহরের গার্ডেনরিচ থানার পাহাড়পুর রোডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণীর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, সকালে সোনালির ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান প্রতিবেশীরা। অনেকবার ডাকাডাকি করার পরও কোনো সাড়া মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন তাঁরা। দেখতে পান, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে সোনালির মৃতদেহ। আর মেঝেতে বসে কেঁদে চলেছে তাঁর ছোট্ট শিশুটি।
কলকাতা পুলিশ জানায়, সোনালির স্বামী রিয়াজ পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গড় দেড় মাস ধরে পেশাগত কারণে অন্যত্র অবস্থান করছেন তিনি। রিয়াজ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ ধার করেছিলেন। কাজে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোনটি সোনালির কাছে রেখে যান। পাওনাদারেরা বিভিন্ন সময়ে ওই মোবাইলে ফোন করেই অর্থের জন্য সোনালিকে তাগাদা দিতেন। পাওনাদারদের অপমান সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের ধারণার সত্যতার ইঙ্গিত মিলেছে সোনালির শিশুর জবানবন্দি থেকেও। পুলিশকে সে জানায়, সকালে তার মা পানি আনতে যান। এর পর এক ব্যক্তি তাঁর কাছে টাকা চাইতে আসে। ওই ব্যক্তি চলে গেলেই সোনালি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন।
সোনালির বাড়ির মালিক সিরাজুদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, চার মাস আগে এলাকাতেই একটি ভবন নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন রিয়াজ। সে সময় পরিচিত একজনের অনুরোধে রিয়াজকে ঘর ভাড়া দেন তিনি। তবে গত দুই মাস রিয়াজ বাড়ি ভাড়া দিচ্ছিলেন না।
সিরাজুদ্দিন আরো জানান, দেড় মাস আগে এক দিন হঠাৎ উধাও হয়ে যান রিয়াজ। তিনি বাইরে কাজে গেছেন বলে সোনালি প্রতিবেশীদের জানায়। পরে সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় স্থানীয় কয়েকটি বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ করতেন সোনালি।
এদিকে পুলিশকে সোনালির মা-বাবা জানায়, সোনালি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রিয়াজকে বিয়ে করেন। তখন থেকেই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল তাঁদের।