শান্তিনিকেতনে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা শুরু

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে শুরু হলো ১২৩তম ঐতিহ্যমণ্ডিত পৌষমেলা। আজ শনিবার সকাল ৭টায় শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় সানাই বাজানো, ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ ও বৈতালিকের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই মেলার সূচনা হয়।
প্রদীপ জ্বালিয়ে এই পৌষমেলার উদ্বোধন করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত ও প্রাক্তন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। আগামী ছয়দিন ধরে চলবে এই পৌষমেলা।
মেলায় শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জ, শান্তিনিকেতন গৃহ, মেলা প্রাঙ্গণের মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে চলবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় স্টলের সংখ্যা এক হাজার ৪০০টি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলকাতা পরিবেশ আদালতের দূষণ সংক্রান্ত একাধিক বিধিনিষেধ মেনে এই মেলার প্রস্তুতি নিয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে আতশবাজি প্রদর্শনী। এবারের মেলায় প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বোলপুর পৌরসভা।
প্রথমদিনেই মেলায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। কয়েক হাজার মানুষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই মেলায় অংশ নিতে বোলপুর স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড—সব জায়গায় রয়েছে পর্যটকদের ভিড়। এর মধ্যে রয়েছেন বহু বাংলাদেশি পর্যটক। বোলপুরের মাটিতে এখন আবাসিক হোটেলে কক্ষের চাহিদাও তুঙ্গে।
প্রতিদিন মেলা চলাকালীন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাইকেল, মোটরসাইকেল, চার চাকার যানসহ সব রকমের গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে এলাকায়। মেলাকে ঘিরে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।
বোলপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তায় ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ১২টি ওয়াচ টাওয়ার, আটটি ড্রপ গেট এবং মেলা প্রাঙ্গণে ১০টি পুলিশি সহায়তাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে পুলিশি সহায়তাকেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে মেলার গাইড ম্যাপ। এ ছাড়া মেলায় ইভটিজিং, চুরি, পকেটমার ও প্রতারণা রুখতে থাকছে সাদা পোশাকের পুলিশ। নারী পুলিশদের নিয়েও গঠিত হয়েছে বিশেষ টিম।
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ট্রাস্টের সম্পাদক অনল কোনার জানান, ১৮৯৪ সালে মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জোড়াসাঁকোয় শয্যাশায়ী, সেই সময় তাঁর নির্দেশে জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ পৌষ উপাসনাগৃহের উদ্বোধন করেন। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এখানে উপস্থিত ছিলেন। উপাসনাগৃহ উদ্বোধন উপলক্ষে কাচঘর সংলগ্ন মাঠে তখন একদিনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় ইলেকট্রিক আলো ছিল না। দিনের বেলায় যাত্রা অনুষ্ঠান হতো।
১৮৯৪ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত একদিনের পৌষমেলা হতো শান্তিনিকেতনে। ১৯৬১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মূল মেলা হতো তিনদিনের। গত বছরেও পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তিনদিনে মেলা শেষ হতেই মাঠ খালি করে দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এবারে পৌষমেলা ছয়দিনের ছাড়পত্র পেয়েছে।