রাজনীতিতে অভিনেতা রজনীকান্ত

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রাজনীতির খাতায় নাম লেখালেন দক্ষিণ ভারতের তামিল কিংবদন্তি অভিনেতা রজনীকান্ত।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই ‘থালাইভা’ বা ‘বস’ রাজনীতিতে আসছেন এমন জল্পনা ছিল তুঙ্গে। এ জন্য ভক্ত, অনুসারী আর শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে গড়েছিলেন ছয় দিনের আলাদা সাক্ষাৎ শিবির।
শেষ দিনে আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রজনীকান্ত জানিয়ে দেন, তিনি নতুন পার্টি গড়ছেন এবং ২০২১ তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের ২৩৪ আসনেই প্রার্থী দেবেন। এই সুপারস্টার বলেন, ‘সবকিছুর জন্য পরিবর্তন দরকার। এখানে এখন এটাই দরকার। আমরা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চাই। আমি সুশাসন আনতে চাই। গণতন্ত্র এখানে কলুষিত হয়ে পড়েছে। আমরা তাকে পরিষ্কার করতে চাই।’
সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘এটা চলচ্চিত্র নয়। এটা রাজনীতি। আমরা আমাদের প্রতিটি প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের কোডামবাক্কামের রাঘবেন্দ্র মণ্ডবে রজনীকান্ত যখন বক্তব্য শুরু করেন, তখন বাইরে ভক্ত আর অনুসারীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তাঁরা নাচ-গান গেয়ে তাঁদের নায়ককে স্বাগত জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, রজনীকান্তের রাজনীতিতে আসা রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। অনেকে আবার মনে করেন, রজনীকান্তই তামিলনাড়ুর আগামী দিনের মুখ্যমন্ত্রী।
অভিনয়জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসে জনমন জয় নেওয়ার উদাহরণ ভারতে নতুন নয়। খোদ তামিলনাড়ু রাজ্যই এখন শাসন করছে একসময়ের রুপালি পর্দার সাড়াজাগানো অভিনেত্রী জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে। তিনি অনুসারীদের কাছে ‘আম্মা’ নামে পরিচিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এ বছর মারা যান তিনি। তার পর থেকেই তাঁর দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এদিকে দক্ষিণের আরেক শক্তিমান অভিনেতা কমল হাসানও রাজনীতিতে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে রাজ্যের মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। কমল হাসান জানিয়েছেন, রাজনীতির ব্যাপারে নতুন বছরেই নতুন ঘোষণা দেবেন তিনি।
ঠিক এমন একটি মুহূর্তে অন্য অনেক, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা দলে (বিজেপি) যোগদানের আমন্ত্রণে সায় না দিয়ে নতুন দল গড়ার ঘোষণা দিলেন ৬৮ বয়সী দক্ষিণের এই সুপারস্টার।
রজনীকান্ত বলেন, ‘রাজনীতিতে আমি কোনো পদ-পদবির জন্য আসিনি। যদি সেটা চাইতাম, তাহলে ১৯৯৬ সালেই পেতে পারতাম। বয়স যখন ৪৬ ছিল, তখন সেটা না করে আমি এই ৬৮ বছরে এটা করতে গেলাম কেন?’
উত্তরে সুপারস্টার বলেন, ‘ইতিহাসের একটা সময় ছিল, যখন রাজা-বাদশারা অন্য দেশ বা রাজ্যের সম্পদ লুট করে নিতেন। কিন্তু আজ আমরা এমন একটি অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছি, যখন শাসকরা তাঁদের নিজেদের দেশের সম্পদ লুট করে নিচ্ছে।’
এ সময় রজনীকান্ত ধর্ম বা বর্ণের (কাস্ট) ভিত্তিতে নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার ভিত্তিতে রাজনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় তিনি নিজের ‘ফ্যানক্লাব’কে শক্তিশালী করারও ঘোষণা দেন। কিছু সাংগঠনিক পরিকল্পনার কথাও জানান, যেগুলো মূলত অবহেলিত অঞ্চলের মানুষ ও নারীদের সংগঠিত করতে সাহায্য করবে।
রজনীকান্ত আরো বলেন, ‘এখানে রাজনীতি ও গণতন্ত্র আজ খুব বাজে অবস্থায় গিয়েছে। অন্য রাজ্যের নেতারা আমাদের তামিলনাড়ু রাজ্য নিয়ে রসিকতা করেন। আর এ সময়ে আমি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারি, তাহলে হয়তো নিজেকে অপরাধী মনে হবে।’
রজনীকান্ত জীবনের প্রথম ভাগে ছিলেন বাসচালকের সহকারী! সেখান থেকে তিনি মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এমন সিদ্ধান্তে তাঁর পরিবারের সায় ছিল না মোটেও। সেসব কঠিন দিনে তিনি সাহায্য পেয়েছেন বন্ধু রাজ বাহাদুরের কাছ থেকে। এক মঞ্চনাটকে কাজ করতে গিয়ে তিনি তামিল ছবির পরিচালক কে বালাচন্দরের নজরে আসেন। সেই থেকে শুরু।
দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঈশ্বর হিসেবে গণ্য রজনীকান্ত মূলত মহারাষ্ট্রের মানুষ। তামিল, তেলেগু, কানাড়া, মালায়লম, হিন্দি এবং এমনকি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।