আসামকাণ্ড : মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

ভারতের আসাম রাজ্যে ‘বাঙালি খেদানো’র তীব্র বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জের ধরে আসামের লতাসিল থানায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
আসামের কৃষক শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসামে জাতি-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ওই সংগঠন।
আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রথম খসড়ায় বহু বাঙালির নাম নেই। এমনকি বহু মুসলিমেরও ওই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেকেই চার পুরুষ বা তারও বেশি সময় ধরে আসামে বসবাস করছেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছেন, যাঁদের তালিকায় নাম নেই, তাঁরা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এ বিষয় নিয়ে গত বুধবার মুখ খোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের গায়ে হাত পড়লে আমি ছেড়ে কথা বলব না।’ তিনি বলেন, ‘আসামে বাঙালি খেদাও চলছে। সব রাজ্যেই অন্য রাজ্যের লোক থাকে। এটা তাদের অধিকার। ৩০-৪০ বছর যারা আছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এক কোটির বেশি মানুষকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলা হচ্ছে। আমি বিজেপি সরকারকে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। শান্তিরক্ষা করুন। ভেদাভেদ করবেন না। মানুষের গায়ে হাত পড়লে আমরা ছেড়ে কথা বলব না।’
মমতার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় আসাম বিজেপি। মমতার মন্তব্যকে নিন্দনীয় উল্লেখ করে আসাম রাজ্য বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, এ ধরনের বিভাজনমূলক সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করা উচিত নয়। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আসামে বহু যুগ ধরে সব মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। সেখানে যেন অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা না করে মমতার তৃণমূল। মমতার মন্তব্যের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে আসামের কৃষক, শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের করে আসাম পুলিশ।
আসামের গুয়াহাটির পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রঞ্জন ভুইয়া বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে লতাসিল পুলিশ থানায় একটা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা আইনানুগ তদন্ত করব।
অন্যদিকে, মমতার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার জন্য নাগরিক পঞ্জি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে আসামের শাসক দল বিজেপি। আসাম রাজ্য বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, ‘আমরা নাগরিক পঞ্জি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন মমতার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করেন।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই চক্রান্ত করছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মাটি শক্ত হচ্ছে, তাই আসাম নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করছেন মমতা।
তবে মমতার নামে অভিযোগ দায়ের হওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনোরকম মামলা বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দমন করা যায়নি, যাবেও না। বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কাজ করছে।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং নজরদারিতে গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে এনআরসির প্রথম খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে তিন কোটি আবেদনের মধ্যে মাত্র এক কোটি ৯০ লাখ মানুষের স্থান হয়েছে ওই তালিকায়। যদিও দ্বিতীয় তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে প্রথম প্রকাশিত তালিকায় আসামের বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নাগরিক বাছাই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আসামের বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী সংগঠন।