পিস্তলের মুখে যুবকের বিয়ে, কান্না

কোনো গুম, হত্যা বা জোর করে বিয়ে দেওয়ার কথা শুনলে আমাদের চোখের সামনে সবার আগে কোনো নারীর মুখ ভেসে ওঠে। কেননা তার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
কিন্তু যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক যুবককে গুম করে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়? চোখ কপালের উঠবে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, গত মাসে ভারতের পাটনায় বিনোদ কুমার নামে এক যুবককে পিস্তলের মুখে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২৯ বছর বয়সী বিনোদকে প্রথমে গুম করা হয়, পরে বিয়ের সকল নিয়ম রীতি পালন করতে তাঁকে বাধ্য করা হয়। যখন বিনোদ তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যখন কাঁদতে থাকে তখন কনেপক্ষের নারীরা তাঁকে মানানোর চেষ্টা করে, কেউ কেউ এসে চোখের পানি মুছে দিতে থাকে।
কিন্তু বিয়ে করতে একেবারেই নারাজ বিনোদ। যখন কনেকে সিঁদুর পরানোর সময় এলো, বিনোদ বার বার অনুরোধ করে বলেন, তিনি সিঁদুর পরাবেন না। তখন কনেপক্ষের কয়েকজন নারীকে বলতে শোনা যায়, তোমাকে আমরা বিয়েই করাচ্ছি, ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছি না।
বিনোদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানায়, তিনি এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন। সেখানে সেই কনের এক আত্মীয়ও যান। সেখানে পিস্তলের মুখে তাঁকে তুলে নিয়ে আসে আর বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। বিনোদের এই অভিযোগ এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত মাসে যখন বিনোদ সময়মতো বাড়ি না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়ে তাঁর ভাই সঞ্জয় কুমার। তারপরই অপরিচিত এক নম্বর থেকে একটা ফোন আসে। জানায়, তাঁর ভাইকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার কথা।
সঞ্জয় ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮-কে জানান, ‘গত ৩ ডিসেম্বর আমার ভাই বোকারো এলাকা থেকে হাতিয়া-পাটনা রুটের ট্রেনে যায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। সেখানে সেই কনের ভাই সুরেন্দ্র যাদব তাঁকে নানা কৌশলে মোকামায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে অপহরণ করে পরে পান্দারাক এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে আমার ভাইকে জোর করে ওই নারী সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ এ ব্যাপারে সাহায্য করতে চায়নি বলে অভিযোগ করেন সঞ্জয় কুমার। সঞ্জয়ের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পান্দারাক থানার কর্মকর্তা প্রভাকর বিশ্বকর্মা। তিনি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘যেহেতু অপহরণের ঘটনাটি মোকামায় ঘটেছে, তাই আমি ওই যুবকের পরিবারকে মোকামায় একটি অপহরণের মামলা করতে বলি।’
পরে সঞ্জয় পাটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানু মহারাজের কাছে যান। পরে তাঁর নির্দেশনায় পান্দারাক থানা পুলিশ সেই গ্রাম থেকে বিনোদকে উদ্ধার করেন, যেখানে জোরপূর্বক বিয়ের পর তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিলো।
ঘটনার পর থেকেই কনেপক্ষ থেকে বিয়ে মেনে নেওয়ার জন্য নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে ফোন আসছে পরিবারের কাছে। এই জন্য এখন পুলিশের নিরাপত্তা চাইছে তারা।
পাটনা শহরের পুলিশ সুপার (এসপি) অমরকেশ নিউজ১৮কে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা পুলিশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবো’।
কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংস্থা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, পুলিশের কাছে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ৩০০০ বর অপহরণ এবং জোরপূর্বক বিয়ের অভিযোগ এসেছে।