বোতলবন্দি কেজো ভূত বিক্রি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার ৪

‘ভূত কিনবেন, ভূত। বোতলবন্দি ভূত। একদম কেজো ভূত। আর সেই ভূত আপনার মনের আশা নিমিষে পূরণ করে দেবে’- ঠিক যেন আলাদিনের প্রদীপের সেই দৈত্যর মতো, যাকে হুকুম করা মাত্রই সব হয়ে যেত। এই রকম বিজ্ঞাপন দিয়েই বিক্রি হচ্ছিল ভূত। আর সেই বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে ভূত কিনতে রাজি হয়ে যান ভারতের বিহার রাজ্যের ধানবাদের এক সন্ন্যাসী। শেষমেশ ভূত আর বিক্রি হয়নি। আগেই প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস গেছে।
বোতলবন্দি ভূতসহ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িও উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে কলকাতা পুলিশের একজন গাড়ির চালকও রয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চার ভূত বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই চারজন হলেন- সুপ্রকাশ দে ওরফে বাপ্পা, জয়ন্ত ধারা, অরূপ দাস এবং বিকাশ গিরি। যারা রীতিমতো বোতলবন্দি ভূতের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে ধানবাদের সন্ন্যাসীর সঙ্গে চার যুবকের দেখা হয়। তখন সন্ন্যাসী জানান, তাঁর একটা কেজো ভূতের দরকার। এটা জানার পর সন্ন্যাসীর কাছে ভূত বিক্রির ফন্দি আঁটেন ওই চার যুবক।
ভূত কেনার জন্য যোগাযোগ করেন ওই সন্ন্যাসীর এক সহকারী তাপস রায় চৌধুরী। তিনি কলকাতা সংলগ্ন বাগুইআটি কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা। ভূত বিক্রেতারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে ১০ লাখ রুপি নিয়ে বর্ধমান শহরে আসতে হবে। সেই কথামতো তাপস তাঁর পরিচিত বাসুদেব কুণ্ডুকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান পৌঁছান। পরে শহরের উল্লাস মোড় থেকে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িতে করে তাঁদের নির্দিষ্ট হোটেলের কক্ষে নিয়ে যান ভূত বিক্রেতারা।
সেখানে সুপ্রকাশ দে নিজেকে পুলিশ অফিসার বলেও পরিচয় দেন। তিনি জানান, অনেক কষ্টে তাঁরা এই কেজো ভূত বোতলবন্দি করেছেন। পরে একটি প্লাস্টিকের বোতল আনা হয়। এর মধ্যে এক রুপির কয়েন দেখিয়ে ভূত নিজেই এটি ঢুকিয়েছে বলে জানান ওই চারজন। তাঁরা জানান, এই ভূত এক ঘর থেকে অন্য ঘরে জামাকাপড় সরিয়ে দেবে। যা বলবেন, তাই করে দেবে। সব কাজ করে দিতে এই ভূত পারদর্শী।
এসব কথা শুনে সন্দেহ হয় ভূত কিনতে আসা তাপস ও বাসুদেবের। এরপর তাঁরা ভূত দেখতে চাইলে তাঁদের কাছে থেকে আগাম ২০ হাজার রুপি চাওয়া হয়। ক্রেতারাও কম না। ভূতের কেরামতি না দেখে এক পয়সাও দিতে নারাজ তাঁরা। এরপর দুই ক্রেতাকে আটকে সব অর্থ নিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি ১০ লাখ রুপি না দিলে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তাপস তাঁর এক বন্ধুকে সাহায্যের জন্য ফোন দেন। এরপর পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে এবং ওই চার ভূত বিক্রতাকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় বর্ধমান থানার আইসি তুষার কান্তি কর জানান, ভূত বিক্রি ও ভূত দেখানোর নামে এর আগে বহু লোককে ঠকিয়েছে এই চক্রটি। এই চক্রের মূল হোতা সুপ্রকাশ দের বাড়ি হুগলি জেলার আরামবাগের মলয়পুরে। তিনি কলকাতা পুলিশের গাড়ির চালক। এ ছাড়া জয়ন্তর বাড়ি হুগলির শ্রীরামপুরের বড়বেগম লেনে, অরূপের বাড়ি হুগলির সিঙ্গুরের বলরামপুরে এবং বিকাশের বাড়ি হুগলির ভদ্রেশ্বরে। শুক্রবার তাঁদের বর্ধমান আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।