মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অমর্ত্য সেন

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। নিজের লেখা বই ‘দ্য কান্ট্রি অব ফার্স্ট বয়েজ’-এ তিনি লিখেছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অমর্ত্য সেন লিখেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ এই প্রথম নয়। কিন্তু, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষায় হস্তক্ষেপ, অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো তা চূড়ান্ত রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে এই সরকারের আমলে।
নালন্দা-বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গেও নিজের বইয়ে লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদির মতো ব্যক্তির ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলাম আমি। ফলে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে আমার কাজ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সরকারের রূঢ় আচরণে আমি এতটুকু অবাক নই!
চলতি বছরের শুরুর দিকেই অমর্ত্য সেন জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রথম দফার মেয়াদ ফুরনোর পর তিনি আর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে থাকতে চান না। অভিযোগ করেছিলেন, মোদি সরকার তাঁকে আর এই পদে চায় না! এ প্রসঙ্গে নিজের বইয়ে তিনি লিখেছেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়! ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে নতুন সরকার।
অমর্ত্য সেন সরে দাঁড়ানোর পর, নালন্দার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ইওকে। নোবেলজয়ী তাঁর বইয়ে লিখেছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে, তবেই নালন্দাকে তাঁর লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারবেন জর্জ ইও।
বইটিতে তিনি দেশের ইতিহাস ও ভবিষ্যতের দাবি নিবে আলোচনা করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নিয়োগের সময় হিন্দুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তিনি লিখেছেন, বেশির ভাগ সময়ই দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাথায় এমন মানুষকে বসানো হচ্ছে, আজীবন হিন্দুত্ববাদের প্রচারকেই যারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন!
উদাহরণস্বরূপ তিনি সাম্প্রতিক কিছু নিয়োগের কথাও উল্লেখ করেন। কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চয়ের প্রধান হিসেবে ইয়েল্লাপ্রগদা সুদর্শন রাওয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এই ব্যক্তির গবেষণা নিয়ে কোনো খ্যাতি না থাকলেও হিন্দুত্ববাদ নিয়ে এই ব্যক্তির মতবাদ বেশ প্রসিদ্ধ। একইভাবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশনের প্রধান লোকেশ চন্দ্রর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যিনি মোদিকে ভগবানের অবতার বলে উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা এফটিআইআইয়ের চেয়ারম্যান পদে গজেন্দর চৌহানকে নিয়োগ করার বিষয় টেনে মোদি সরকারের আমলে নিয়োগ নিয়েই ফের একবার মুখ খুললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।