সিরিয়ায় হামলায় যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয়
রাসায়নিক অস্ত্র হামলার অভিযোগে সিরিয়ায় গতকাল শনিবার সকালে আক্রমণ চালায় পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা চালায়। কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এ হামলায়? চলুন তা দেখে নিই একনজরে :
ইউকে টর্নেডো ফাইটার্স
সিরিয়ার ওপর চালানো হামলায় অংশ নেয় চারটি ব্রিটিশ টর্নেডো ফাইটার জেট। এসব যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইল। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই হামলায় টাইফুন ফাইটার জেটও ব্যবহার করা হয়েছে।
সাইপ্রাসের রয়েল এয়ারফোর্স ঘাঁটি আকরোতিরি থেকে সিরিয়ার হোমসে রাসায়নিক অস্ত্রের ভাণ্ডার লক্ষ্য করে এসব বিমান উড়ে যায়।
দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট টর্নেডো জিআর৪ যুক্তরাজ্যের প্রধান স্থল হামলাকারী বিমানগুলোর মধ্যে একটি। এগুলোতে স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল যুক্ত করা থাকে। এই মিসাইলগুলো ৪০০ কেজি ওজনের হয় এবং ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে হানা দিতে পারে। এর অর্থ হলো, এই মিসাইলগুলো ছোড়ার জন্য সিরিয়ার আকাশসীমায় পৌঁছানোর দরকার নেই।
পেন্টাগন জানিয়েছে, ব্রিটিশ এই যুদ্ধবিমানগুলো থেকে আটটি স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল গতকাল ছোড়া হয়েছে।
ফ্রেঞ্চ রাফেল জেট
সিরিয়া মিশনে অংশ নিয়েছে ফ্রান্সের রাফেল ফাইটার জেট। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁ টুইটারে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে দেখা গেছে যে সিরিয়া হামলায় অংশ নিতে উড়ে যাচ্ছে বিমানগুলো।
ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে জানান, তাঁদের বিভিন্ন বিমানঘাঁটি থেকে বিমানগুলো উড়ে গেছে। ব্রিটিশ টর্নেডোর মতো এ রাফেল বিমানগুলোও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট। এগুলোতেও স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল সংযুক্ত থাকে, যা ২৫০ মাইলের বেশি উড়তে সক্ষম। এর অর্থ, এই বিমানগুলোও সিরিয়ার আকারসীমায় না পৌঁছেই দেশটিতে হামলা চালাতে সক্ষম।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরাসি মিরাশ জেটও হামলায় অংশ নেয়। সব মিলিয়ে ফ্রান্সের যুদ্ধবিমানগুলো নয়টি মিসাইল ছুড়েছে।
ইউএস বি-১ বোমার্স
সিরিয়া হামলায় মার্কিন বিমানবাহিনী দুটি বি-১ বোমার ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট বি-ওয়ান ১৯টি জেএএসএসএম ক্রুজ মিসাইল ছুড়েছে। যেগুলো ৪৫০ কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং এটি ৩৭০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে।
বি-১ যুদ্ধবিমানগুলো কোথা থেকে উড়ে গেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর তা না জানালেও কয়েক মাস আগেই কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল মার্কিন এই বিমানগুলোকে।
ইউএস গাইডেড মিসাইল ক্রুসারর্স, ডেসট্রয়ার্স ও সাবমেরিন
পেন্টাগন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি সাবমেরিন সিরিয়া হামলায় অংশ নিয়েছিল। লোহিত সাগর থেকে স্থলে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়া হয় ৩০টি। এ ছাড়া ইউএসএস লাবুন ছোড়া হয় সাতটি। এর মধ্যে ইউএসএস হিগিনস ২৩টি টমাহক ছোড়ে উত্তর আরব সাগর থেকে।
মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস জন ওয়ার্নার ভূমধ্যসাগর থেকে ছোড়ে ছয়টি টমাহক।
টমাহক ক্রুজ মিসাইল
গতকাল সিরিয়ায় চালানো হামলায় অসংখ্য টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়া হয়। ব্রিটিশ এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো থেকে এসব হামলা চালানো হয়। এই টমাহকগুলো বেশ ধীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। সে কারণে মাঝপথেও এগুলোর লক্ষ্য পাল্টানো যায়। এর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
ফ্রেঞ্চ ফ্রিগেটস ও ক্রুজ মিসাইল
পেন্টাগন জানিয়েছে, সিরিয়ায় চালানো যৌথ হামলায় ফ্রান্স তিনটি ক্রুজ মিসাইল ছুড়েছে।
এর মধ্যে দেশটির নৌবহরে যুক্ত হওয়া নতুন মাল্টিমিশন ফ্রিগেটও রয়েছে। তবে এই মিসাইলটির লক্ষ্যমাত্রা গোপন রাখা হয়েছে। এর বর্ণনায় কেবল বলা হয়েছে, এটি খুব দীর্ঘ দূরত্বে আঘাত হানতে পারে। তবে বিভিন্ন কারখানার ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, এ ধরনের ফ্রিগেট থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরত্বেও আঘাত করা যায়।
এর আগে গত সপ্তাহে সিরিয়ার দুমা এলাকায় রাসায়নিক হামলার পর পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার সব সময়ই দুমায় রাসায়নিক হামলার কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া এ হামলার বিরোধিতা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বলেন, তিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এগুলো হলো—১. দামেস্কের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, যেখানে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র উৎপাদন করা হয় বলে জানা যায়; ২. হোমসে একটি রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার ও ৩. হোমসেই পাশেই আরেক অস্ত্রভাণ্ডার, যেখান থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।