‘শিশুকে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা লজ্জাজনক’

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে শিশু আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনি বলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও জম্মু-কাশ্মীরে শিশুকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা লজ্জাজনক।’
আজ বুধবার রামনাথ কোবিন্দ আসিফাকে নিয়ে এসব কথা বলেন।
রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দেশের যে কোনও প্রান্তে এই ধরনের ঘটনা লজ্জাজনক। আমরা কী ধরনের সমাজ গড়ে তুলেছি সেটা ভেবে দেখতে হবে। কোনো মেয়ে বা নারীর সঙ্গে যাতে আগামী দিনে এই রকম ঘটনা না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।’
এই পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘ধর্ষকদের কোনো মতেই ছাড়া হবে না। আমাদের মেয়েরা সুবিচার পাবে।’ সেইসঙ্গে সামাজিক ও মূল্যবোধ বাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মোদি।
গত ১০ জানুয়ারি আট বছর বয়সী আসিফা বানুকে অপহরণ করা হয়। এরপর দিনের পর দিন তাকে গণধর্ষণ করা হয়। পুলিশের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শ্বাসরোধ করে হত্যার আগে তাকে আরেকবার ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এক ধর্ষক। এই পুরোটা সময় আসিফাকে না খাইয়ে রাখা হয়েছিল বলেও জানায় পুলিশ।
কাথুয়া এলাকায় একটা বড় তৃণভূমি আছে। সাধারণত শীতের সময়টায় যাযাবর বাকারওয়ালা সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানেই নিজেদের পশুদের চড়াতে নিয়ে যায়। এলাকাটিতে যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ খুব বেশি নয়, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। সেখানেই একটি যাযাবর পরিবারে জন্ম আসিফা বানুর।
গত জানুয়ারি মাসে প্রতিদিনের মতোই এক সকালে আট বছর বয়সী আসিফা বানু নিজের বাড়ি থেকে মেষগুলো নিয়ে উপত্যকার মাঠে বেরিয়ে যায়। সেদিন তাঁর পরনে বেগুনি রঙের একটা জামা। এক সময় একটা লোক আসিফাকে বনের দিকে যেতে ইশারা করে। আসিফাও কিছু না বুঝে সেই লোকটার পেছন পেছন যায়।
পুলিশের বর্ণনানুযায়ী, বনের ভেতরে যাওয়ার পর পরই আসিফাকে ঘাড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘুমের ওষুধ খেতে বাধ্য করা হয় তাকে। এরপর ওই লোকটি বন্ধুদের সহায়তায় আসিফাকে বনের একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখে।
পরের তিনটি দিন অন্তত তিনজন মিলে আসিফার ওপর গণধর্ষণ চালায়। শেষটায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় মেয়েটিকে। হত্যার আগেও নাকি শেষবারের মতো তাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল এক ধর্ষক। বেশ কয়েক দিন পর বনের মধ্যে আসিফার থেঁতলে যাওয়া মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই বেগুনি রঙের জামাটিই পরা ছিল তখন।
আসিফার চাচা মুহাম্মদ জেন আসিফাদের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসবাস করেন। জেন বলেন, ‘এটা একটা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা, যেখানে মাত্র চারটি মুসলিম পরিবার বসবাস করে। দ্বন্দ্বটা মূলত গত বছর শুরু হয়, যখন মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে বিক্রি করা এক একর জমি হিন্দুরা ফেরত চায়। এই পরিবারগুলোকে তাড়াতেই এই অত্যাচার শুরু হয়।’