ভারতে ছয় বাংলাদেশি যুবককে মারধর ও টাকা লুট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে যাওয়া ছয় বাংলাদেশি যুবককে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। ছয় যুবকের টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
কলকাতা সংলগ্ন নিউটাউন থানা এলাকায় গতকাল সোমবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি ছয় যুবককে মারধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে নিউটাউন সংলগ্ন কৃষ্ণপুর রামকৃষ্ণপল্লী এলাকায় এক আত্মীয়র বাসায় যান ওই ছয় বাংলাদেশি যুবক। তাঁরা তাঁদের এক আত্মীয় স্থানীয় শ্যামল ঢালির বাড়িতে ওঠার জন্য এসেছিলেন। এদিন রাতে তারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি রামকৃষ্ণপল্লী এলাকায় এসে তাঁদের আত্মীয় শ্যামল ঢালিকে ফোন করেন। কিন্ত ওই সময় শ্যামল ঢালি বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ফোনে তাদের একটু অপেক্ষা করতে বলে জানান, তিনি একটু দূরে আছেন। শিগগিরই বাসায় ফিরবেন। এর পরই বাংলাদেশ থেকে আসা ছয়জন শ্যামল ঢালির বাড়ির কাছেই একটি মাঠের মধ্যে গিয়ে বসেন।
জানা যায়, ওই সময় স্থানীয় একটি ক্লাবের প্রায় ১০ জনের একটি দল বাংলাদেশি যুবকদের পরিচয় জানতে চায়। এরপর ছয় বাংলাদেশি যুবক নিজেদের পরিচয় দেন এবং জানান তাঁরা বৈধভাবে সেখানে গেছেন। তবে কথা শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশি যুবকদের মারধর করা শুরু করে স্থানীয় যুবকরা।
মারধরের একপর্যায়ে বাংলাদেশি যুবকদের কাছ থেকে একাধিক মোবাইল ফোন ও প্রায় এক লাখ রুপি কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয় তারা।
পরে ওই ছয় বাংলাদেশি কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সহযোগিতায় নিউটাউন থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ পাওয়ার পরই নিউটাউন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাঁচজনকে আটক করে। আটক ব্যক্তিদের কাছে কেড়ে নেওয়ার চারটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। তবে কেড়ে নেওয়া টাকা-পয়সা এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।
বাংলাদেশি যুবক ধনঞ্জয় সানা বলেন, ‘আমরা মোট ছয়জন বাংলাদেশ থেকে আমাদের এক বন্ধুর মামার বাসায় থাকব বলে সেখানে যাই। আমরা পুরিতে রথযাত্রা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এদিন একদল ছেলে এসে আমরা বাংলাদেশি জেনেই টাকা দাবি করে। সেটা আমরা দিতে না চাওয়ায় আমাদের মারধর ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আমরা স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশিদের আত্মীয় শ্যামল ঢালি বলেন, ‘আমার এক সম্পর্কিত ভাগ্নে তার পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল সোমবার সন্ধ্যায়। তারা পুরীতে জজ্ঞন্নাথদেবের রথযাত্রা দেখতে ভারতে এসেছিল। এদিন ওরা এসে আমার বাড়ি তালা বন্ধ দেখে আমাকে ফোন করে। আমি ও আমার পরিবার কিছুটা দূরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম।’
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শিবপদ সরদার বলেন, ‘আমি ও আমার পাঁচ বন্ধুরা মিলে আমার মামা শ্যামল ঢালির বাড়িতে যাই। কিন্তু মামাকে বাড়িতে না পেয়ে সামনে একটি মাঠে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ওই সময় একদল যুবক এসে আমাদের বাড়ি বাংলাদেশে শোনার পরই মারধর করে এবং আমাদের সবার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও প্রায় এক লাখের উপর টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।’
এই ঘটনায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অমিত জাভেলগি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ভারতে আসা ছয়জনকে মারধর করা হয়েছে এবং তাদের টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এরইমধ্যে অভিযুক্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’