পশ্চিমবঙ্গে ছেঁড়া ভূতের আতঙ্ক!

রূপকথার কল্পিত ব্রহ্মদৈত্য, স্কন্ধকাটা ভূত কিংবা মেছে ভূত নয়। একদম বাস্তবেই ছেঁড়া ভূত নামে রহস্যময় নতুন এক ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
সম্প্রতি রাজ্যের আলিদুয়ারপুর জেলার ফালাকাটা শহরের আশ্রমপাড়া অঞ্চলে অদৃশ্য ছেঁড়া ভূতের আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, আশ্রমপাড়ার বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢুকে টাকাপয়সা, কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন জিনিস অদ্ভুতভাবে ছিঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে ‘অশরীরী’ একটা কিছু। সবকিছু ছিঁড়ে ফেলছে বলে এ ভূতকে ছেঁড়া ভূত নামে ডাকা হচ্ছে।
আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা সুভাশিস ভৌমিকের সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে নিজ ঘরে বিছানার নিচে সযত্নে তিনি ১৫টি ১০০ রুপির নোট রেখেছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলে সে নোটগুলো বের করতে গিয়ে সুভাশিসের স্ত্রী দেখেন সব নোট মাঝ বরাবর ছিঁড়ে রাখা।
শুধু সুভাশিস নয়, তাঁর প্রতিবেশী বিমল রায়ের বাড়িতেও ঘটেছে একই ঘটনা। তালা দেওয়া আলমারিতে রাখা অনেকগুলো রুপির নোটও মাঝ বরাবর ছেঁড়া অবস্থায় পেয়েছেন তিনি।
ঘটনা এখানে থেমে থাকলেও হতো, কিন্তু ছেঁড়া ভূতকে নিয়ে রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার বিভিন্ন রকম কার্যকলাপে। জানা গেছে, আশ্রমপাড়ার অনেকেই খেয়াল করেছেন বাড়ির আঙিনায় মেলে দেওয়া জামাকাপড়ের রশিও চোখের সামনে ছিঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে কেউ, অথচ কাউকে চোখে দেখা যাচ্ছে না। ঘরের ভেতর রাখা লোহার টেবিল, চেয়ার, ফ্যান সব ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে কেউ।
এলাকায় একের পর এক বাড়িতে দিনদুপুরে এমন আজগুবি ঘটনা ঘটতে থাকায় বর্তমানে ভয়ানক আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
এ রহস্যময় ঘটনার বিষয়ে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আশ্রমপাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ছেঁড়া ভূত রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না পুলিশ।
ফালাকাটা থানার পুলিশ কর্মকর্তা বিনোদ গজম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ ঘটনাকে মোটেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না। এর ভেতরেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’
এদিকে, অনিরাপত্তা বোধের কারণে ঘরে রাখা টাকাপয়সা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে রেখে আসছেন আশ্রমপাড়ার অধিবাসীরা। কেউ কেউ ঘরের দামি আসবাবপত্র ও পোশাক দূরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও রেখে আসতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুভাশিস ভৌমিক বলেন, ‘আমরা ভূতে বিশ্বাস করি না। তবে এ ঘটনাকে চুরিও বলতে পারছি না। এখন বাড়িতে থাকতে ভয় লাগছে।’
স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী প্রবীর রায় চৌধুরী বলেন, ‘ভূতের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। মনে হচ্ছে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। কেউ বিশেষ কোনো মতলবে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে।’