ইমরান খানকে সতর্কতার বার্তা আজহারউদ্দিনের

‘নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ক্রিকেট মাঠ আর রাজনীতির ময়দান, দুটো কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা মঞ্চ।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে বসার আগে ইমরান খানের প্রতি এমনই সতর্কতার বার্তা দিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আজহারউদ্দিন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান দায়িত্বভার গ্রহণের আগে আজহার বলেন, ‘ইমরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন দেখে ক্রিকেটমহলের অনেকেই হয়তো খুশি। আমিও অভিনন্দন জানাচ্ছি ইমরানকে। পাশাপাশি অনুজ ক্রিকেটার এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে ইমরানকে একটা কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দেবো : একটা ক্রিকেট দলের হয়ে ক্যাপ্টেন্সি করা আর দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া কিন্তু এক নয়।’
আজহার বলেন, ‘ইমরান নিজে ক্রিকেট জীবনে খুব ভালো ক্যাপ্টেন ছিলেন। সেইসঙ্গে দারুণ ভালো বোলারও ছিলেন। ইমরানের ইনডিপারগুলো খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তেন। পায়ের দিকে যে বলগুলো গোত্তা খেয়ে এসে পড়ত। এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের দিকে কিন্তু ওই রকম অনেক মারণ-ডেলিভারি ধেয়ে আসবে। সেগুলোকে ইমরান কীভাবে সামলান, সেটাই ঠিক করে দেবে ইমরানের ভাগ্য।’
আজহারউদ্দিন বলেন, ‘ক্রিকেট মাঠে দেখেছি, মাঠে দাঁড়িয়েই ইমরান তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত নিতেন। কারো সাহস হতো না মাঝখানে আসার। এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।’
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন আজ সকালে জানায়, ইমরানের দল ১১০টি আসন পেয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৬৩টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৪২টি আসন।
গতকাল ইমরান খান বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমত, আমরা জয় পেয়েছি। ২২ বছর আগে আমি যে ইশতেহার তুলে ধরেছিলাম, আল্লাহ আমাদের তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কেন আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলাম, রাজনীতি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কিছু দিতে পারবে না। কিন্তু আমি চাই, আমার নেতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন, পাকিস্তান তা হয়ে উঠুক।’
অনিয়মের দাবি নাকচ করে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা পাকিস্তানের এই জাতীয় নির্বাচনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ’ বলেও দাবি করেন। বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আপনি মনে করেন যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, তাহলে আমরা তদন্তের কথা বলব। এ ব্যাপারে আমরা আপনার পাশে আছি। আমি মনে করি, পাকিস্তানের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন। যদি কোনো দলের এতে সন্দেহ থাকে, তাহলে যেসব আসনের ব্যাপারে অভিযোগ থাকবে, সেগুলো নিয়ে তদন্ত হতে পারে।’
পিটিআইপ্রধান বলেন, ‘ধনীদের দিয়ে একটি দেশের জীবনযাত্রার মান স্বীকৃত হতে পারে না। গরিবরা কীভাবে জীবনযাপন করে, সেটাই বিবেচ্য। ধনীদের দ্বীপ আর গরিব মানুষের সমুদ্র নিয়ে কোনো রাষ্ট্র কখনো উন্নতি করতে পারে না।’
আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান আরো বলেন, ‘সামনে আমাদের সুশাসন ও অর্থনৈতিক বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এত খারাপ অবস্থায় আর কখনই আসেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারা তাদের কাজটি সঠিকভাবে করেনি।’
পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৩৭ আসনে জয় পেতে হতো ইমরানের দলকে। ১১০ আসনে জয় পাওয়ায় এখন তাঁকে জোট করে সরকার গঠন করতে হবে।