বাংলাদেশি সন্দেহে ত্রিপুরায় যুবক গ্রেপ্তার, পরে জামিন

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশের নাগরিক সন্দেহে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। ওই যুবকের নাম আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরী। গত বুধবার রাতে তাঁকে ত্রিপুরার আগরতলার গোলচক্কর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আগরতলা পশ্চিম থানা পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আজম খান ভারতে এসে বিভিন্ন এলাকা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন। সম্প্রতি তিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বাড়ি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরীকে পশ্চিম ত্রিপুরার মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক সর্বজিত চৌধুরীর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
পুলিশ দাবি করেছে, আজম খান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জালালাবাদ সেনানিবাসে কমান্ডার পদে চাকরি করতেন। কিন্ত প্রশিক্ষণ চলাকালীন তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০০৪ সালে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করেন। ত্রিপুরায় এসে তিনি নাম পাল্টে রাখেন রাজু চৌধুরী। এরপর কয়েক বছর আগে তিনি কলের মিস্ত্রির ঠিকাদার হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই সূত্রে ত্রিপুরার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সরকারি আবাসনেও কলের কাজের জন্য তিনি আসেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরী ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বাড়ির মানচিত্রও সংগ্রহ করেছেন। পুলিশের সন্দেহ, আজম খানের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন হুজির যোগসূত্র রয়েছে। বিষয়টি চারদিকে জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী।
ত্রিপুরার আগরতলার মহকুমা শাসক (সদর) সুমন মজুমদার জানান, ওই ব্যক্তি নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং একটা সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। পরে তিনি সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
সুমন মজুমদার আরো জানান, আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরী ত্রিপুরায় আসার পর এক ভারতীয় নারীকে বিয়ে করেন। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি ত্রিপুরায় আসার পর সরকারি প্লাম্বিং ঠিকাদারের লাইসেন্স বের করে চলতি বছরের শুরুর দিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসনে প্লাম্বিংয়ের যাবতীয় কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া ত্রিপুরার রাজ্যপালের সরকারি বাসভবনসহ (রাজভবন) একাধিক সরকারি ভবনে কলের মিস্ত্রির ঠিকাদারের কাজ করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে ওই ব্যক্তি কোনোভাবে গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি না।
এ বিষয়ে ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জানা যায়, এর আগে আজম খানের স্ত্রী নাসিমা খাতুন তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ বাংলাদেশ থেকে এসে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে তাঁকে বিয়ে করেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্ত সেসময় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত বুধবার রাতে মহকুমা শাসক সুমন মজুমদার এবং পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গোলচক্কর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশ, ষড়যন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাও দেওয়া হয়। তবে বৃহস্পতিবার আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরীকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে, আজম খান ওরফে রাজু চৌধুরীর আইনজীবী মৃণাল কান্তি বিশ্বাস অবশ্য জানিয়েছেন, রাজু চৌধুরী বাংলাদেশের নাগরিক নন। ভারতে বসবাসের সমস্ত পরিচয়পত্র তাঁর ও তাঁর বাবার রয়েছে।