যৌন হয়রানির অভিযোগে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ

একাধিক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবর। আজ বুধবার দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়ে দেন।
পদত্যাগপত্রে এম জে আকবর লিখেছেন, এই বিষয়টিতে আমি যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে আদালতে বিচার চেয়েছি, তাই বিচারের স্বার্থে আমি আমার কার্যভার থেকে ইস্তফা দেওয়াটাই সমীচীন বলে মনে করছি। আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবেই তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়তে চাই। যে কারণেই আমি ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।
এর আগে এম জে আকবরের পদত্যাগ চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি লেখেন নারী সাংবাদিকদের সংগঠন। ফাউন্ডেশন অফ মিডিয়া অ্যান্ড ব্রিহান মুম্বই ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট নামের ওই সংগঠন প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের দায়ের করা মানহানির মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানায়। চিঠিতে নারী সাংবাদিক সংগঠনের তরফে লেখা হয়, ক্ষমতাশালীরা মানহানির মামলা করে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে থাকেন। এটা আসলে নারীদের চুপ করিয়ে রাখার একটা প্রয়াস। তাঁরা আরো জানান, আকবরের হাতে নিগৃহীতা প্রিয়া রামানি ছাড়াও আরো ২০ জন সাংবাদিক তাদের সঙ্গে রয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই আকবরের যৌন নির্যাতনের শিকার। আর অন্যরা সাক্ষী রয়েছেন সেই সমস্ত ঘটনার।
নারী সংগঠনের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, এই যুদ্ধে রামানি একা নন। বিচারপতির কাছে আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন আমাদের বক্তব্যও শোনেন। আমাদের অনেকেই যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছি। অনেকে সাক্ষী রয়েছি সেই সমস্ত ঘটনার।
এদিন যে ২০ জন নারী সাংবাদিক এই লড়াইতে সামিল হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এক সময়ে এশিয়ান এজে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে তাঁদের অনেকেই মুম্বই মিরর। ডেকান ক্রনিক্যাল বা অন্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে হ্যাসট্যাগ-মি-টু ইন্ডিয়া আন্দোলনে একের পর এক নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে প্রথমে মুখ খোলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। আকবর সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর তিনি গত সোমবার অভিযোগকারী প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ (মানহানি) ও ৫০০ (মানহানির শাস্তি) ধারায় মামলা করা হয়। এই মামলায় ৯৭ জন আইনজীবীকে ময়দানে নামিয়েছেন আকবর। যারমধ্যে ৩০ জন নারী আইনজীবী। তবে সাংবাদিক প্রিয়া রামানিও এই লড়াই লড়তে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
এম জে আকবরের বিরুদ্ধে প্রিয়া রামানি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন নারী যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন।