মোদির প্রস্তাবে মমতার না

ভারতে নাগরিক সংশোধনী বিলে কোনোভাবেই সমর্থন করবে না তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার এ কথা সাফ জানিয়ে দিলেন দলটির চেয়ারপারসন ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গে এসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগর ও দুর্গাপুরে পরপর দুটি জনসভা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঠাকুরনগরের জনসভা থেকে তিনি নাগরিক সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যেসব অত্যাচারিত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষজন ভারতে চলে আসছে, ভারত সরকার তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চায়। সেজন্য লোকসভায় নাগরিক সংশোধনী বিল পাস করানো হয়েছে। তবে রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ না থাকার কারণে ওই বিল পাস করাতে সমস্যা রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে নাগরিক সংশোধনী বিল পাস করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারকে পাশে থাকার আবেদন জানিয়ে যান তিনি।
এই আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা সাফ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেন, নাগরিক সংশোধনী বিলে তাঁরা সমর্থন করবেন না।
তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, নাগরিক সংশোধনী বিলে তৃণমূলের সমর্থন চেয়ে মোদি কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। কারণ, নাগরিক সংশোধনী বিলে সম্মতি দিতে তৃণমূল বিলটি পাস করাতে সহায়তা করলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা শরণার্থীদের ভোটব্যাংক স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকবে গেরুয়া শিবিরের দিকেই। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটিকে সমর্থন করলেও তাঁর লাইমলাইটে আসার সুযোগ সেই অর্থে নেই। যার বেশিরভাগটাই পেয়ে যাবেন মোদি তথা বিজেপি।
অন্যদিকে, ওই বিলে সই না করলেও বিপদ রয়েছে মমতার। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের আহ্বানে সভায় এসে প্রধানমন্ত্রী মোদি সাফ বুঝিয়ে দিয়ে যান, তিনি নাগরিক সংশোধনী বিল পাস করে ভারতে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চান। সেক্ষেত্রে তৃণমূল পাশে থাকলেই সেটা সম্ভব। ফলে তৃণমূল যদি ওই বিল পাসে সহায়তা না করে তাহলে ভারতে চলে আসা একটা বড়ো অংশের মতুয়াদের ও শরণার্থীদের বিরাগভাজন হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে মমতার উভয়সংকট বাড়িয়ে নাগরিক সংশোনী বিলের তাস খেলে গেলেন মোদি।
তবে মোদি যতই রাজনৈতিক কাটাকুটি খেলার ফাঁদ পেতে তাস খেলুন না কেন, মমতা কিন্তু বরাবরের মতোই মোদি বিরোধিতায় এদিনও অনড় থেকেছেন। মমতা উল্টো মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ারই যোগ্য নন। মোদির বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এবারের লোকসভা ভোটে মোদি জিরো পাবেন বলেও দাবি করেন তিনি।