ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ বাংলাদেশ : প্রণব

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে যে একটা রাষ্ট্রের জন্ম হতে পারে, তার উদাহরণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের জন্ম।
গতকাল বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় চলমান ৪৩তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রণব মুখার্জি।
বাংলাদেশের উত্থানপর্বের কথা স্মরণ করতে গিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আজ থেকে ৪৮ বছর আগে যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের একটাই চাওয়া ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর বাংলাকে সে দেশের জাতীয় ভাষায় পরিণত করা।’
‘অবশেষে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সে দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলো। আজ সারা বিশ্বে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন, মুক্ত চিন্তাভাবনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতার নিরিখে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে,’ বলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি।
বাংলা আজ এক বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাষা উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘সারা বিশ্বে বাংলা অন্যতম প্রধান একটি ভাষা। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে মিলিয়ে ২০ কোটিরও বেশি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। দুই বাংলার বাংলাভাষী মানুষ বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে।’
বইমেলা নিয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘ছেলেবেলায় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে বন্ধুদের সঙ্গে হাত ধরে বইমেলা প্রাঙ্গণে আসতাম। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতাম। কিন্তু ভারতের মতো একটি দেশের একাধিক মন্ত্রিত্ব, রাষ্ট্রপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানোর কারণে সময়ের অভাবে বইমেলায় আসতে পারি না ঠিকই, কিন্তু মন পড়ে থাকে সেই ছেলেবেলার দিনগুলোর দিকে।’
“আমার যে দুঃখ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেকটা সেই রকমই দুঃখের কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি (ঢাকায় একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে) বলেছেন, ‘এখন আর (বইমেলায় আসতে) পারি না, সময় পাই না, নানা বাধায়। কিন্তু মনটা চলে যায় সেই ছেলেবেলার দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর দিকে। যখন সকাল থেকে সন্ধ্যাবেলা পর্যন্ত বইমেলায় ঘুরতাম। বইয়ের পাতা উল্টে দেখতাম। সারাটা দিন বইমেলায় কেটে যেত,” বলেন প্রণব মুখার্জি।
প্রণব মুখার্জি আরো বলেন, ‘আজ আমার মনে পড়ে সরকারি কাজে আটকে না থাকলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে বা কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বাইরেও কেবল বইমেলার আনন্দে যোগ দিতেই প্রায় প্রতিবছরই এসেছি। বইমেলায় ঘুরে বেড়িয়েছি। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করেছি। সেটা একটা অতিরিক্ত পাওনা ছিল।’
বাংলার মানুষ বই ভালোবাসে উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কলকাতার মানুষ, বাংলার মানুষ বই ভালোবাসেন। তাই বইমেলায় অংশ নেওয়টা তাদের কাছে সহজাত। আমাদের সবার মানসিকতা একটাই, আর সেটা হলো বইমেলায় আসা।’