দিল্লির মসনদ দখলের লড়াই শুরু

নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ ২০ রাজ্যের ৯১টি লোকসভার আসনে ভোট নেওয়া হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার—এ দুটি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে।
লোকসভার মোট ৫৪৩টি আসনের জন্য সাত পর্বে ভোট নেওয়া হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হবে আগামী ১৯ মে। তারপর ২৩ মে একযোগে গণনা হবে ভোটের। তারপরই জানা যাবে দিল্লির মসনদ ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতেই থাকবে, নাকি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট ক্ষমতায় আসবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ৩০০ জনের মতো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যদিও নকশাল অধ্যুষিত এলাকা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে কোথাও সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা, কোথাও সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা, আবার কোথাও সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট নেওয়া হবে।
প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গের এ দুটি কেন্দ্রে মোট ১৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজ্যের এ দুটি লোকসভা কেন্দ্রে তিন হাজার ৮৪৪টি পোলিং বুথে ইভিএমের সাহায্যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। প্রতিটি বুথেই থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দুটি কেন্দ্রেই এবার চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতে এবার মোট সাত দফায় (১১, ১৮, ২৩, ২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২, ১৯ মে) ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। ৩৯ দিন ধরে চলবে এই ভোটযজ্ঞ। গণনা হবে আগামী ২৩ মে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩ জুন। তাই তার আগেই নতুন সরকার গঠন করতে হবে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটির মতো। ভারতের মোট জনসংখ্যার (১৩০ কোটি) ৬৯.২৩ শতাংশ এবার ভোটদানের অধিকারী হবেন। এটা সমগ্র ইউরোপ ও ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
এবারে নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.৬০ কোটি। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ৩৮ হাজার ৩২৫ জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা আট হাজারের বেশি। দেশজুড়ে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার। ভোট নেওয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যন্ত্রে। ভোটার তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোটটি দিয়েছেন কি না, তা জানতে ইভিএমের সঙ্গেই যুক্ত থাকছে ভিভিপ্যাট ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এক হাজার ৮৪১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
ভোট অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে ভারতের নির্বাচন কমিশনও তৎপর। প্রতিটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে সশস্ত্র বহিনী মোতায়েন, স্পর্শকাতর কেন্দ্রে অতিরিক্ত নজরদারি হিসেবে সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোন, টহলদারি পুলিশভ্যানসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখছে। ১.১ কোটি ভোটকর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুর্গম স্থানে তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থার সুবিধার্থে বিমান, হেলিকপ্টার, ট্রেন, নৌকার পাশাপাশি হাতি ও উটের ব্যবস্থা রেখেছে কমিশন।
ভোটকে কেন্দ্র করে ভুয়া খবর, গুজব, অশ্লীল ভাষা ছড়িয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরও কড়া নজরদারি চলছে। ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও কোনো প্রার্থীকে পছন্দ না হলে ‘নোটা’ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে ভোটারদের।
এবারের নির্বাচনে মোট খরচের পরিমাণও কম নয়। স্বাধীন ভারতে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে। সেবার নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ১০ কোটি ৪৫ লাখ রুপি। শেষবার ২০১৪ সালে সেই খরচ দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭০ কোটি রুপিতে। এবারও দিল্লিভিত্তিক ‘সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ’-এর তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে খরচের সংখ্যাটা ৫০০ বিলিয়ন রুপি ছাড়াতে পারে।