ফেরদৌসকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এসে রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গত রোববার ও সোমবার নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস। পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়া আগরওয়ালের হয়ে ভোট চান তিনি।
এ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফেরদৌসের গ্রেপ্তার ও ভিসা বাতিল নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশিত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা বাংলাদেশ হাইকমিশন তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ হাইকমিশনের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ফেরদৌসকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। কারো ভিসা বাতিলের এখতিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের নেই।
এ ছাড়া এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম প্রেস সচিব মোফাকখারুল ইকবালকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে ফেরদৌস ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন কি না এবং ভারতের নির্বাচনে বিদেশি নাগরিককে কেন ব্যবহার করা হলো তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানায় বিজেপি।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার দাবি করেন, সামাজিক মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে সোমবারেই ভিডিওসহ অভিযোগ পাঠানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। কিন্তু কমিশন সেই অভিযোগ অস্বীকার করায় মঙ্গলবার ফের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বিজেপির এই অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস দেউলিয়া হয়ে গেছে, যে কারণে এখন অন্য দেশ থেকে শিল্পী ভাড়া করে আনতে হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়া লাল আগরওয়ালের সমর্থনে প্রচার করেন বাংলাদেশের নায়ক ফেরদৌস। সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের প্রায় ৫১ শতাংশ মুসলমান। রায়গঙ্গে এবারের লড়াই চতুর্মুখী। সেই চতুর্মুখী লড়াইয়ের ময়দানে এই কেন্দ্রে মুসলিম ভোটব্যাংক একটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেই কারণে দুই বাংলার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা বাংলাদেশের ফেরদৌসকে মাঠে নামায় তৃণমূল কংগ্রেস।
এ ঘটনায় এরই মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, কীভাবে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলের প্রচারে বিদেশি নাগরিক আসতে পারেন! আগে কখনো এমনটা দেখিনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন কানুন মানেন না বলেও অভিযোগ করেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনো ভোটার কম পড়লে রোহিঙ্গাদের ডেকে আনছেন, আবার কখনো সিবিআই অফিসারদের গ্রেপ্তার করছেন। কাল হয়তো দেখব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও প্রচারে ডাকবে তৃণমূল। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি আমরা।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক তথা ডাকসাইটে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দিচ্ছে। এবার বাংলাদেশি নাগরিক এনে ভোটে প্রচার চালাচ্ছে। ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে এটি অশনিসংকেত।
তবে ফেরদৌসের প্রচার নিয়ে বিজেপি যতই প্রতিবাদে সোচ্চার হোন না কেন, ফেরদৌসকে প্রচারে এনে তৃণমূল কোনো ভুল করেনি বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক তৃণমূলের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলাম। ফেরদৌসকে প্রচারে এনে আমরা কিছু ভুল করিনি। দেশবিরোধী, বেআইনি বা নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেনি তৃণমূল। আর নির্বাচন কমিশন যদি এ বিষয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বিজেপিকেও ছাড়া হবে না। রাম নবমীতে অস্ত্র হাতে মিছিল করেছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। সেটাও আমরা নির্বাচন কমিশনে জানাব।