ফণীর জন্য পশ্চিমবঙ্গে ‘রেড অ্যালার্ট’

আজ শুক্রবার দিবাগত রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়তে চলেছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ফণী। ফণীর আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গের উপকুলীয় এলাকায় জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’। শুক্রবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় শুরু হয়ে যায় প্রবল বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া। যদিও সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থান করছে ঘূর্নিঝড় ফণী। কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে এবং দিঘা সমুদ্র সৈকত থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ফণী।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, পশ্চিমবঙ্গে ফণী প্রবেশের সময় তার গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। যা সর্বোচ্চ ১১৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানবে পশ্চিমবঙ্গে। গভীর রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপর একটানা পাঁচ ঘন্টা দাপট চালিয়ে ফণী অনেকটাই শক্তি হারিয়ে চলে যাবে বাংলাদেশের দিকে।
তবে ফণীর দাপট এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায়। ফণীর দাপটে ইতিমধ্যেই লন্ডভন্ড চেহারা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরের গ্রামীন এলাকা সাকুয়া গ্রামে। সেখানে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে পড়েছে বাড়ির ছাদ। উড়ে গেছে টিনের চাল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন নবান্ন সুত্রে জানানো হয়, ঝড়ো হাওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬৭ টি ও ঝাড়গ্রামে ২০ টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফণীর জন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২৩ হাজার ৬৮০ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ১৩ হাজার ৯৪৪ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শহর কলকাতাতেও প্রায় দুই হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাত যত বাড়ছে ততোই পশ্চিমবঙ্গে ফণী আতঙ্ক প্রহর গুনছে মানুষের মনে। দিঘা, ফ্রেজারগঞ্জ সহ উপকুল এলাকায় উত্তাল অবস্থা নিয়েছে সাগর। বাড়ছে সাগরের পানি। গ্রামে ঢুকে পড়েছে পানি। রাত যতো বাড়ছে ততোই ভয়াল আকার নিচ্ছে সমুদ্র। পর্যটনকেন্দ্র দিঘা, বকখানি, মন্দারমনি পর্যটকশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। শুক্রবার সকালেই ওডিশা উপকূলে আছড়ে পড়েছে প্রবল শক্তিশালী ঘুর্নিঝড় ফণী। ভূভাগে প্রবেশের পর প্রবল শক্তিশালী থেকে বর্তমানে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ফণী। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এদিন মধ্যরাত থেকে শুরু করে পরিদিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালাবে ফণী। শহর কলকাতায় রয়েছে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কা।
কলকাতায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের পর বন্ধ করে দেওয়া হল গড়িয়াহাট মল ও সাউথ সিটি মল। পুরসভার পক্ষ থেকে এরইমধ্যে রাস্তায় থাকা ক্রেন সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরের অন্যান্য নির্মীয়মান বাড়িগুলির দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। নিরাপদে সরিয়ে রাখা হয়েছে অনেক মানুষকে। শহরের পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়িগুলিকে নিয়েও ভয় রয়েছে। কলকাতায় ৯০ কিলোমিটার বেগে যদি ফণী যায়, তাহলে বহুবাড়িই অক্ষত থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন পুরসভার কর্মকর্তারা।
শিয়ালদহ দক্ষিন শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিয়ালদহ-বনগা, শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায় বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কলকাতা বিমান বন্দরও। শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত কলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে বন্ধ থাকবে সমস্ত উড়ান। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে খড়গপুরে থেকে ফনীর গতিবিধি নজরে রাখছেন এবং প্রশাসনিক ততপরতা চালাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী ২৪ ঘন্টা কেউ যাতে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বের হন। নিরাপদ স্থানে সকলকে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।