মুখ ফাটল দুই বিজেপি প্রার্থীর, নাক ফাটল তৃণমূল এজেন্টের

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর চলেছে জালভোট, বোমাবাজি, গুলি, সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর, প্রার্থী পুলিশ ধাক্কাধাক্কি, ইভিএম ভাঙচুর এবং ভোটার ও প্রার্থীর লোকজনের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা।
এদিন তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মুখ ফেটেছে বিজেপির দুই প্রার্থীর। বোমার আঘাতে এক তৃণমূলকর্মী ও এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল এবং বিজেপির পক্ষ থেকে।
সোমবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে। এ কেন্দ্রের বিজেপিপ্রার্থী অর্জুন সিং রাজ্য পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছে। এই অভিযোগে রাজ্য পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমে তর্কাতর্কি এবং পরে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের অভিযোগ, স্থানীয় টিটাগড় থানার পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতেও তৃণমূলের সমর্থকরা তাঁর ওপর ইট ছুঁড়ে হামলা চালায়। যে হামলায় তাঁর ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। এ ঘটনার পরই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে।
এই কেন্দ্রে বিজেপি ও সিপিএমের অভিযোগ, এলাকার বহু বুথে তাদের দলের এজেন্টদের বসতে দেয়নি তৃণমূল। এমনকি খবর পেয়ে স্বয়ং বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং বুথে ঢুকতে গেলে তৃণমূলের এক এজেন্ট তাঁকে বাধা দেন। এই ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন। প্রতিক্রিয়ায় অর্জুন সিং বলেন, ‘তৃণমূলের এতটাই স্পর্ধা হয়েছে যে তারা আইনকানুন কিছুই মানছে না।’
এদিন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে। বনগাঁর গাইঘাটার ফুলসরা খড়ের মাঠ এলাকার ১২৮ নম্বর বুথে বিজেপির কর্মীরা মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তৃণমূলের ওপর চড়াও হয়ে তাদের বাইক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। এ ঘটনায় আহত হন চারজন। এমনকি বিজেপির কর্মীরা নিরীহ লোকজনকে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ মিলেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
পাশাপাশি এদিন দুপুরে বনগাঁয়ের হিমলি এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। অসিত দাস নামে এক বয়স্ক তৃণমূলকর্মী ভোট দিয়ে ফেরার সময় বোমার আঘাতে আহত হন। একইসঙ্গে আহত হন এক পুলিশ সদস্যও। তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর এলাকায় ঘুরে যাওয়ার পরেই বিজেপি কর্মীরা বোমাবাজি শুরু করে। সেইসঙ্গে সেখানে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়া হয়।
স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকে রাখেন। যাতে বিজেপি কর্মীরা বাইক নিয়ে এলাকায় ঢুকতে না পারেন। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী এসে রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়। এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী।
এদিন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আমডাঙ্গার তেঁতুলিয়াতেও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বাধে। ভাঙচুর চালানো হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে। আক্রান্ত হন সংবাদকর্মীরাও। আহত সংবাদকর্মীদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিন দুপুরে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের ধনেখালি এলাকায়ও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বাধে। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় স্থানীয় বুথে গিয়ে হাতেনাতে জালভোটের ঘটনা ধরে ফেলায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ভাঙচুর চালানো হয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে। এ সময় কেন্দ্রের ইভিএম মেশিনও ভাঙচুর করা হয়।
এদিন শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের জগদীশপুরেও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বাধে। এতে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবজিত সহকারীর মুখ ফেটে যায়। শ্রীরামপুরে দুই তৃণমূল এজেন্টকে মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে। এ কেন্দ্রে সিপিএমের এজেন্টদের লাঠি দিয়ে তাড়া করে বুথের বাইরে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ব্যারাকপুরের বীজপুরে একটি বুথে ভোটারদের দুইবার করে ভোট দিতে হয়েছে। প্রায় ৮৫ জন ভোটার একই দিনে দ্বিতীয়বার ভোট দেন বলে জানা যায়। বীজপুরের ১১৬ নম্বর বুথে ইভিএমে পরীক্ষামূলক সংখ্যা না মুছেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। ফলে পুরোনো ভোটের চিহ্ন থেকে যায় ইভিএম মেশিনে। এরপর বিষয়টি খেয়াল হতেই ফের ইভিএম ফরম্যাট করে শুরু হয় দ্বিতীয়বার ভোটগ্রহণ।
এছাড়াও এদিন বনগাঁ কেন্দ্রের গয়েশপুরে বহিরাগতদের বাড়ির ভেতর থেকে টেনে বের করে এনে ঘাড়ধাক্কা দিয়েছে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী। এদিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে একের পর এক জালভোট, ভোটারদের প্রভাবিত করা এবং বিরোধী ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তোলে তৃণমূল। এদিন ভোটগ্রহণ শুরুর পর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন খারাপ হয়ে ভোট গ্রহণে বিলম্ব ঘটে বলেও জানা যায়।
পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, হুগলি, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ কেন্দ্রে চলে ভোটগ্রহণ। এদিন পশ্চিমবঙ্গের ৭টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৮৮৯ জন। প্রার্থী ছিলেন ৮৩ জন।