ভোটে অশান্তি পশ্চিমবঙ্গে, বিজেপি নেতা খুন, তৃণমূল কর্মীর লাশ

ভারতে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় আজ রোববার ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই অশান্তির আগুন জ্বলল পশ্চিমবঙ্গে। সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ। কেন্দ্রগুলো হলো তমলুক, কাথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর। এই আটটি কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা এক কোটি ৩৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৯ জন। মোট ৮৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিন সকালে ভোট শুরু হতেই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কেশপুরে। বিজেপি এজেন্টকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েই সেখানে যান ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা সাবেক আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ। সে সময় তৃণমূলের নারী সমর্থকরা তাঁকে বাধা দেন।
পুলিশের সামনেই ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। তাঁর পায়ের নখ উপড়ে যায়। মাটিতে পড়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। তৃণমূল বলছে, কেশপুরে কোনো বিজেপি নেই। তাই বুথে বিজেপির কোনো এজেন্ট বসতে দেওয়া হবে না।
ভোট শুরুর পরপরই হলদিয়ায় সিপিএম প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সিপিএম প্রার্থী পরিতোষ পট্টনায়েকের কাথি আসন থেকে লড়ছেন। তৃণমূল তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বলে সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার নারায়ণগড়ে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় পাতলিতে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসেও হামলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় আহত হন তিন তৃণমূলকর্মী।
বিজেপি নেতা খুন, তৃণমূল কর্মীর লাশ
অন্যদিকে, ভোটের আগের রাতেই এক বিজেপি নেতাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে। নিহত বিজেপি কর্মীর নাম রামিন শিং। তিনি স্থানীয় বিজেপির বুথ সভাপতি ছিলেন। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছে তৃণমূলের দিকে। যদিও তৃণমূল ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাশাপাশি ভোটের আগের রাতেই পূর্ব মেদিনীপুরের কাথিতে উদ্ধার হলো এক তৃণমূল কর্মীর রক্তাক্ত দেহ। মৃতের নাম সুধাকর মাইতি। এই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু ঘিরে ভোটের আগের রাতেই অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকা।
একই সঙ্গে ভোটের আগের দিন রোববার রাতে তমলুকের ভগবানপুরে গুলিবিদ্ধ হলেন দুই বিজেপি কর্মী। আহত বিজেপি কর্মীদের নাম ইনন্ত গুছাইত ও রণজিত মাইতি। তাঁ দের হাতে ও বুকে গুলি লেগেছে।
জানা গেছে, ভোটের আগের রাতে এলাকায় ভয়-ভীতি সঞ্চার করতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ওই এলাকায় ঢুকে বোমাবাজি শুরু করে। সে সময় বিজেপি কর্মীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে দলবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া করে। সে সময় তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই গুলিতেই আহত হন দুই বিজেপি কর্মী।
অন্যদিকে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতাসংলগ্ন বিরাটি এলাকায় রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনার জন্য তৃণমূল সিপিএমকে দায়ী করেছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমার গাড়িবহর যাওয়ার সময় সিপিএমের মিছিল থেকে স্থানীয় বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতেও হামলা চালানো হয়।’
ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসহ সাতটি রাজ্যের ৫৯টি কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ। সারা দেশে এক লাখ ১৩ হাজার ১৬৭টি পোলিং স্টেশনে চলছে ভোটদান। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯৭৯ জন।