ভারতে ভোট : বুথে বুথে ইভিএম বিভ্রাট

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোট গ্রহণ চলছে আজ। এরই মধ্যে ভোট গ্রহণের সময় দেখা দিয়েছে নানা রকম সমস্যা। তবে মূল অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। কারণ, ভোট শুরুর পরই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দেখা দেয় বিভ্রাট। আর এ জন্য তীব্র গরমে ভোট দিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোটাররা। ফলে ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
শেষ পর্বে ভারতের আটটি রাজ্যের ৫৯টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আসনগুলোর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ১৩টি, পাঞ্জাবের ১৩টি, পশ্চিমবঙ্গের নয়টি, বিহারের আটটি, মধ্যপ্রদেশে আটটি, হিমাচল প্রদেশের চারটি, ঝাড়খন্ডের তিনটি ও চণ্ডীগড়ের একটি আসন। শেষ দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটির কিছু বেশি। ভাগ্য নির্ধারণ হবে মোট ৯১৮ প্রার্থীর।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের নয়টি আসনে চলছে ভোট গ্রহণ। এই নয়টি আসনের মধ্যে রয়েছে কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর, যাদবপুর, দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর ও ডায়মন্ড হারবার। সেখানে মোট ভোটার প্রায় দেড় কোটি। নয়টি কেন্দ্রে মোট প্রার্থী রয়েছে ১১১ জন। এই নয়টি লোকসভা কেন্দ্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রেও চলছে উপনির্বাচন।
আজ ভোট গ্রহণ শুরুর পরই পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষিপ্ত অশান্তি শুরু হয়ে যায়। সকাল থেকে ইভিএম বিভ্রাটে রীতিমতো ভোগান্তির শিকার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটাররা। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিকের ওপর ইভিএম বিভ্রাটের খবর আসতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। একদিকে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। তার ওপর ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর বিরক্ত প্রকাশ করতে থাকেন ভোটাররা। ফলে শেষ দফার ভোটে ‘খলনায়ক’ হয়ে যায় নির্বাচন কমিশন।
আজ সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে যান বহু ভোটার। এ ঘটনার পর থেকেই বিরোধী দলগুলো চক্রান্তের অভিযোগ আনছে। কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ, যাদবপুর, দমদম, বারাসাত, ডায়মন্ড হারবারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৫০টি বুথে ইভিএম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের ধাপে ভোট গ্রহণেও একাধিক ইভিএম মেশিন বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এবার সর্বাধিক ইভিএম মেশিন বিভ্রাটের ঘটনা ঘটল।
এদিকে গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে সকাল সকাল বিভিন্ন বুথে গিয়েছিলেন ভোটাররা। পরে জানা যায়, ইভিএম মেশিন খারাপ হয়েছে। মেশিন বদল করার জন্য সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ভোট গ্রহণ শুরু হয় না। সময় বাড়তে থাকায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বেশিরভাগ ভোটারই ফিরে যান বাড়িতে।
এ ব্যাপারে সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, আগে থেকে ইভিএম মেশিন খারাপ করে রাখা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে এ কাজ করেছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপিকে সাহায্য করছে।
সবচেয়ে বড় কথা, কোনো ক্ষেত্রেই এই ইভিএম দ্রুত বদল করার প্রক্রিয়া হয়নি। সেখানেই কপালে ভাঁজ পড়েছে সিপিএম কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতাদের।
ইভিএমে কারচুপি করার অভিযোগও উঠেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আজ সকালে দক্ষিণ কলকাতার মডার্ন হাই স্কুলে ভোট দেন বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী নুসরত জাহান। পাশাপাশি ভোট শুরুর পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে।
কলকাতার মুদিয়ালি দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাধার মুখে পড়েন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। দমদমে প্রিসাইডিং অফিসারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। ওই সময় ক্যামেরার সামনেই কেঁদে ফেলেন প্রিসাইডিং অফিসার।
কলকাতার বেলগাছিয়ার গুরুদাসপল্লীর বুথে সিপিএম এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন সিপিএম প্রার্থী কনিকা ঘোষ। এ ছাড়া বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মিনাখায় বুথ জ্যামের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় বিজেপির কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন।
এ ছাড়া কলকাতার তিলজলায় বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হয়। এ সময় ইটের আঘাতে আহত হন দুই বিজেপি কর্মী। তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। রাহুল সিনহার বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ উঠেছিল।
এদিকে জয়নগর কেন্দ্রে ভোটারদের মুড়ি, বাতাসা ও ছোলা দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বারাসাত কেন্দ্রের দেগঙ্গার পিলাবাড়িয়ায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চলে বোমাবাজিও। মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের।
এদিকে ভোটের সময় যত গড়াচ্ছে, ততই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর উঠে আসছে। জাল ভোট, বুথ দখল, ভোটদানে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে শেষ দফার ভোট গ্রহণে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে।