পশ্চিমবঙ্গে হাঙ্গামা, তৃণমূলের ওপর চড়াও বিজেপি-সিপিএম

সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পরই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর চড়াও হতে শুরু করেছে বিজেপি ও সিপিএম। ভোটের ফলাফলে বিজেপির দাপট বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক হিংসার পারদ। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে সহিংসতা।
গত বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মোট ৪২টি আসনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২২টি আসন। অন্যদিকে গতবার মাত্র দুটি আসন পেলেও এবারে বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন। ফলে তৃণমূলের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান ও তৃণমূলের পতনের ফলে দুই দলের নেতাকর্মীদের প্রতি পারস্পরিক বিদ্বেষ ও সহিংসতার মাত্রা বেড়ে চলেছে। বিজেপির নব্যপ্রভাববলয়ের জোরে কেবল দলীয় নেতাকর্মীরাই নয়, একটি আসনও না পাওয়া সিপিএমও সহিংস হয়ে উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি ও সিপিএমের নেতাকর্মীরা তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে তাদের কার্যালয় দখল, পুনর্দখল করে নিচ্ছে।
অন্যদিকে মোহভঙ্গ হওয়া তৃণমূলও বিরোধীপক্ষের এমন উত্থানকে সহজ করে নিতে পারছে না। তাদের ব্যাপারেও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যের কেশপুর, কাকিনাড়া, সিতাই, নদীয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে নদীয়ার চাকদহ এলাকার গৌড়পাড়া তপোবন স্কুলের কাছে দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সন্ত ঘোষ (২২) নামে এক বিজেপি কর্মী। এটিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, গত রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে গল্প করার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সন্ত। সে সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় একদল দুষ্কৃতকারী। গলায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই সন্তর মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সন্ত। নির্বাচনের পুরোটা সময় বিজেপির হয়েই কাজ করেন তিনি।
বিজেপির হয়ে প্রচার চালানোর জেরেই সন্তর ওপর হামলা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এদিকে এ হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শনিবার সকালে চাকদহ থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। শুধু তাই নয় ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা সকাল থেকেই রানাঘাট শিলাইদহ শাখার শিমুরালি, চাকদহ ও মদনপুর স্টেশনের রেললাইনে বসে পড়েন ট্রেন আটকে দেন। এতে বহু যাত্রী গন্তব্যস্থলে যেতে না পেরে দীর্ঘক্ষণের জন্য স্টেশনে আটকা পড়েন। বিজেপি কর্মীরা এ সময় ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে থাকেন। এর বাইরেও চাকদহের জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তারা।
অন্যদিকে কেশপুরে হেরে গেলেও রাজ্যে বিজেপির দাপট বাড়ার জেরে এ এলাকায় তৃণমূলের অনেক কার্যালয় বিজেপি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেশপুরে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে ৯৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা দেব।
হাতিয়াড়া এলাকাতেও তৃণমূলের পার্টি অফিসে বিরোধীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি হাওড়ার শালিমার, নিউটাউন, কাঁকিনাড়া ও ভাটপাড়ায় তৃণমূল কার্যালয়ে হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নিজেরা একটি আসন না পেলেও ক্ষমতাসীন তৃণমূলের শক্তি ক্ষয় ও বিজেপির উত্থানে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চেষ্টা করছে বাম দলগুলো।
গতকাল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুর ২ নম্বর রেলগেটের কাছে তৃণমূলের পার্টি অফিস পুনর্দখল করেছে সিপিএম। জানা যায়, ২০১১ সাল পর্যন্ত এ কার্যালয়টি সিপিএমের ছিল। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে এটি দখলে নেয়।
সিপিএমের লোকজন বিজেপির ঝাণ্ডা হাতে বোমা ও বন্দুক নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে শাসকদল।
গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গায় বিজেপির পতাকা লাগানো মোটরসাইকেলে করে সিপিএমের লোকজন তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। হামলাকারীরা বাঁশ ও লাঠি নিয়ে তৃণমূলের বুথ সভাপতিসহ অন্য নেতাকর্মীদের মারধর করেন বলে জানায় তারা।