গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে চিকিৎসকদের আন্দোলন, ভোগান্তিতে রোগীরা

ভারতের কলকাতার নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জুনিয়র চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকদের আন্দোলন গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগী ও তার পরিবারের লোকজন।
কলকাতার এনআরএসে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে এদিনের কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চিকিৎসকরা।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ভারতের রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে শুরু হয়েছে এই কর্মবিরতি। এ ছাড়া দিল্লির এইমস হাসপাতালের তরফে সমর্থন করা হয়েছে এই কর্মবিরতিকে। এইমসের রেসিডেন্ট চিকিৎসকরাও আজ দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন। যদিও তারা এইমসের আইসিইউ, ইমার্জেন্সি ও লেবার রুমের পরিষেবা চালু রেখেছেন। এ দিন তারা মিছিল করে কলকাতায় এনআরএসে জুনিয়র চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি, তারা অচলাবস্থা কাটাতে অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
সোমবার কর্মবিরতি শুরু হতেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যায়, চিকিৎসকদের ফাঁকা চেম্বার, নেই চিকিৎসক, বন্ধ হাসপাতাল ক্লিনিকের বহির্বিভাগ। ভারতের রাজস্থান রাজ্যে এ দিনের চিকিৎসক কর্মবিরতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সেখানে জরুরি পরিষেবা চালু রাখলেও বহির্বিভাগ বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। নিজেদের চেম্বারেও বসেননি চিকিৎসকরা। বারানসীর অন্যতম সুন্দরলাল হাসপাতালেও চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে রোগীদের। ভুবনেশ্বর এবং ঝাড়খণ্ডেও চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। রাচিতে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। আসামেও চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।
এই কর্মবিরতির জেরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও বহির্বিভাগ এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগী ও তাদের পরিবারের লোকজন। ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছে কর্মবিরতি।
কর্মবিরতির ডাক দেওয়া চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএর সাধারণ সম্পাদক আর ভি অশোকন বলেন, হাসপাতাল চত্বরে এই ধরনের হামলা চিকিৎসকদের মনোবল নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এতে আখেরে ক্ষতি হয় রোগীদেরই। কারণ, মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়ার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন চিকিৎসকরা। তাই কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কড়া আইন প্রয়োজন।
আর ভি অশোকন জানান, কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে এরই মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে আর্জি জানিয়েছে আইএমএ। কড়া আইনি পথ খুঁজে বের করার আবেদন করা হয়েছে।
এমনকি হাসপাতাল চত্বরকে ‘সেফ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করারও দাবি জানানো হয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠনটির তরফ থেকে।
এদিকে প্রবল চাপের মুখে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে বলে সর্বশেষ জানা গেছে। সোমবার দুপুরে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনেই তাঁদের কাছে পৌঁছে যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন নবান্নের আমন্ত্রণপত্র। পাশাপাশি জানা গেছে, জুনিয়র চিকিৎসকদের পরবর্তী দাবি অনুযায়ী গোটা বৈঠক লাইভ না হলেও নিরপেক্ষ ক্যামেরা দিয়েই তা রেকর্ড করা হবে এই বৈঠক। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কার্যালয়ে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করার পর তা পৌঁছায় এনআরএস হাসপাতালে। চিঠিতে জানানো হয়েছে ৩টা থেকে শুরু হবে বৈঠক। কাজেই আড়াইটার মধ্যে ১৪টি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের পৌঁছানোর আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠক রেকর্ডের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সর্বশেষ খবর, এনআরএসে ফের আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের গভর্নিং বডির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সম্মতিতে বৈঠকের লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিংও হচ্ছে।
গত সোমবার কলকাতার নীল রতন সরকার হাসপাতালে টেংরা এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসককে মারধরের পর আন্দোলনের ডাক দেন সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকরা। এ আন্দোলন এখন ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।