দুই হাসপাতালের ভর্তি করেনি কেউ, দাদির কোলে শিশুর মৃত্যু!

টানা তিন ঘণ্টা ধরে সরকারি হাসপাতালের দুই শাখার মধ্যে টানাপড়েনের জেরে মৃত্যু হলো চার দিনের সদ্যোজাত শিশুর। বুধবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে। হাসপাতালটির নাম মহারানা প্রতাপ জয়েন্ট হাসপাতাল।
উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি হাসপাতালের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে বরখাস্ত করেছে এবং অন্যটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ঊর্বশী নামের ওই শিশুটি গত ১৫ জুন একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বুধবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। উদ্বিগ্ন বাবা-মা, দুজনেই কৃষক, দ্রুত তাকে নিয়ে একটি সরকারি হাসপাতালের কমপ্লেক্সে পৌঁছায়। কিন্তু যে চিকিৎসক পুরুষদের শাখায় কর্মরত ছিলেন, তিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করতে রাজি হননি। একই কমপ্লেক্সে অবস্থিত আর একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, যেখানে মেয়েদের চিকিৎসা হয়, সেখানে নিয়ে যেতে বলেন।
তৎক্ষণাৎ শিশুকে নিয়ে সেখানে যান তার মা-বাবা। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন বেড নেই। আবারও অসহায় অবস্থায় শিশুকে নিয়ে পুরুষ শাখায় ফেরেন তাঁরা।
শিশুর দাদি কুসমা দেবী বলেন, ‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ছোটাছুটি করে বেড়াতে হয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক করি ওকে বাড়িতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু ও হাসপাতালের সিঁড়িতেই মারা যায়।'
শিশুটির মেডিক্যাল স্লিপে রেকর্ড রয়েছে কীভাবে তাকে একই কমপ্লেক্সের মধ্যে এক হাসপাতাল থেকে অন্যটিতে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।
দুই হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে বিবাদও সামনে এসেছে। পুরুষ শাখার প্রধান ড. কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্ত ও মহিলা শাখার প্রধান ড. অলকা শর্মা পারস্পরিক দোষারোপের মাধ্যমে বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। কেউই ওই মৃত্যুর দায় নিতে চাননি।
বরখাস্ত চিকিৎসক কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘শিশুটিকে ওপিডিতে (বহির্বিভাগ) নিয়ে গিয়েছিল ওর মা-বাবা। সেখান থেকে তাকে মহিলা শাখার এসএনসিইউতে (স্পেশালাইজড চাইল্ড কেয়ার ইউনিট) নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু তারা শিশুটিকে ফিরিয়ে দেয়। শিশুটি ইমার্জেন্সিতে পৌঁছালে আমরা তার চিকিৎসা করতাম। যখন শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে তার মা-বাবা ইমার্জেন্সিতে পৌঁছান, তখন আমরা তাকে ভর্তি করার প্রক্রিয়া শুরু করি।'
মহিলা শাখায় চারটি বেডে আটটি শিশু ভর্তি ছিল। ড. অলকা শর্মা বলেন, ‘আমরা ওই পরিবারকে বলি পুরুষ শাখায় ফিরে যেতে। পুরুষ শাখার কর্মীরা চোখ বুজে যে কাউকে এখানে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু আমাদের সব চিকিৎসা সরঞ্জাম, যেমন ওয়ার্মার, সে সব সরকারের কাছে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চারটি ওয়ার্মার রয়েছে। যেখানে আমরা ইতিমধ্যেই আটটি শিশুকে ভর্তি করেছি। বেড ফাঁকা থাকলে শিশুটিকে অবশ্যই ভর্তি করতাম।'
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুধবার রাতে বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন। তিনি বলেন, ‘বরেলির পুরুষ হাসপাতালের পুরুষ প্রধানকে আমি বরখাস্ত করেছি কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে। পাশাপাশি মহিলা শাখার প্রধানের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি কর্মীদের কোনো অসংবেদনশীলতাকেই সহ্য করা হবে না নতুন উত্তরপ্রদেশে।'
আর একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘গুরুতর অসুস্থ এক শিশুকে পুরুষ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর, যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে শিশু চিকিৎসক ছিল, তার চিকিৎসা শুরু না করে তাকে মহিলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিলা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকও শিশুটিকে ফিরিয়ে দেন।'