‘ইস্তফা দিয়েছি, আমি আর কংগ্রেসের সভাপতি নই’

ভারতে গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হওয়ার পর দলের সভাপতি পদে ইস্তফা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই ইস্তফাপত্র এবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। নির্বাচনে পরাজয়ের সমস্ত দায় নিয়ে আজ বুধবার পাকাপাকিভাবে দলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাহুল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কর্মী মতিলাল ভোরাকে অন্তর্বর্তী সভাপতি পদে নিয়োগ করতে চলেছে কংগ্রেস। বুধবার চার পাতার ইস্তফাপত্রের কপি টুইট করে প্রথম খবরটি প্রকাশ্যে আনেন রাহুল গান্ধী নিজেই। সেখানে কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে জানান তিনি।
এরপর রাহুল গান্ধী বলেন, ‘দেরি না করে, দলের শিগগিরই নয়া সভাপতি নির্বাচন করা উচিত। আমি এখন আর এই দৌড়ে নেই। আমি ইতিমধ্যে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি। এখন আমি আর কংগ্রেস সভাপতির পদে নেই।’
জানা যায়, কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি, সভাপতি পদে এখনই নির্বাচন হওয়া উচিত করা বলে জানান রাহুল গান্ধী। তিনি দাবি করেন, গান্ধী পরিবারের বাইরে অন্য কোনও ব্যক্তিকে সভাপতি নির্বাচিত করা উচিত।
সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাহুল গান্ধীর ইস্তফা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে দলের অন্দরে। এরইমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন দলের বহু নেতা। সোমবার পদত্যাগের বিষয় নিয়ে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেসের পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রী। বারবার রাহুলকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অনুরোধ করেন। কিন্ত তাঁদের প্রস্তাবে অনড় রাহুল। তখন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। কিন্তু তারপরও রাহুল তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও সরবেন না বলে জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে, রাহুলের এই পদক্ষেপ এবং টুইটারে পদত্যাগপত্র পেশ করাকে ‘নাটক’ বলে দাবি করছে বিজেপি।
রাহুল গান্ধী টুইটারে লিখেছেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ বা ঘৃণা নেই। তবে ওদের ভারতের ধারণার বিরোধী এই বিরোধিতা বহু পুরনো। লড়াইটাও বেশ শক্ত। ওরা যেখানে বিভেদ দেখে সেখানেই আমি ঐক্য খুঁজি। যেখানে ওরা ঘৃণা দেখে সেখানেই আমি ভালোবাসা খুঁজি।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে রাহুল লিখেছেন, ‘দেশে ভাতৃত্বের বন্ধন নষ্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ও কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে আমি ওই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।’
রাহুল আরও লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আরএসএসের সঙ্গে আমি লড়াই করেছি। কারণ দেশকে আমি ভালোবাসি। কখনও কখনও আমি একাই লড়েছি। এর জন্য আমি গর্বিত। আরএসএসের লক্ষ্যই ছিল দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করা। সেটা তারা করতে পেরেছে। আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে। আসল বিপদের এখানেই শুরু। এখন থেকে হয়তো দেশের ভাগ্য নির্ধারণের থেকে নির্বাচন হবে শুধুমাত্র নাম কা ওয়াস্তে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে উদ্ধার করতে হবে। এর জন্য কংগ্রেসকে বদল করতে হবে।’