ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুন, নারী ও প্রেমিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার এক নারী ও তাঁর প্রেমিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছেন বারাসাতের একটি আদালত। পাশাপাশি দুজনকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন বিচারক।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবারই ওই মামলায় মনুয়া মজুমদার নামের ওই নারী ও তাঁর প্রেমিক অজিত রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। এ সময় অনুপম সিং নামের এক ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে অজিত রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি তাঁর প্রেমিকা মনুয়ার সঙ্গে মিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অপরাধেও দোষী সাব্যস্ত করেন বারাসাত চতুর্থ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট।
প্রায় দুই বছর ধরে চলেছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মামলার শুনানি। মামলার শুনানি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রেমিক অজিত রায়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার গৃহবধু মনুয়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার মনুয়াকাণ্ডের রায়দানকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে ভিড় জমান অনুপম সিংয়ের প্রতিবেশীরা। উপস্থিত সঙ্গে ছিলেন অনুপম সিংয়ের মা-বাবাও। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুপম সিংয়ের বাবা-মা বাংলাদেশের নাগরিক। কেবল আদালতের রায় শোনার জন্যই গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতে যান তাঁরা। তবে জানা যায়, মনুয়া ও তাঁর প্রেমিকের যাবজ্জীবন সাজার ঘোষণায় খুশি হননি অনুপম সিংয়ের বাবা-মা। ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির সাজা চেয়েছিলেন তাঁরা। সঠিক বিচার পাননি বলে অভিযোগ করে অনুপমের বাবা-মা জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লড়বেন তাঁরা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে মনুয়া স্বীকার করেন, হত্যার ষড়যন্ত্র করা ছিল আগে থেকেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২ মে, মনুয়ার দেওয়া বিকল্প (ডুপ্লিকেট) চাবি ব্যবহার করে বারাসাতের হৃদয়পুরে অনুপম সিংয়ের বাড়িতে ঢুকে লুকিয়ে থাকে মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায় ওরফে বুবাই। সে সময় ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন অনুপম সিং, আর মনুয়া ছিলেন তাঁর বাবার বাড়িতে। সেখান থেকেই প্রেমিকের কাছ থেকে স্বামী খুনের আপডেট পাচ্ছিলেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অজিতের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল মনুয়ার। প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার জন্যই স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরানোর ছক কষেন মনুয়া। মনুয়ার কথাতেই অনুপমকে সরানোর দায়িত্ব নেন অজিত। মাথার পেছনে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয় অনুপমকে। অজিত যখন অনুপমকে আঘাত করছিলেন, সে সময় অজিতের ফোনের অন্যপ্রান্তে ছিলেন মনুয়া। ফোনে স্বামীর মর্মান্তিক আর্তনাদ শোনেন মনুয়া। এ ঘটনার পর কয়েকদিন কান্নাকাটি করার অভিনয় করেন মনুয়া। কিন্তু পুলিশের তদন্তে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় মনুয়ার অভিনয়।
প্রথমে মনুয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মনুয়াকে জেরা করেই অজিত রায়ের নাম পান তদন্তকারীরা। পরে অজিতকেও গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমদিকে নিজের দোষ স্বীকার করতে চাননি মনুয়া মজুমদার। পরে প্রেমিক অজিত রায়ের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয় মনুয়াকে। আর তাতেই সাফল্য পান তদন্তকারীরা। এরপর দুজনকে দীর্ঘ জেরা শেষে, ৮৬ দিনের মাথায় ৪৬৯ পাতার প্রথম চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। পরে আরেকটি চার্জশিটে অনেক নতুন তথ্যপ্রমাণ দেয় পুলিশ। চার্জশিট অনুযায়ী, মনুয়াকেই এ খুনের মাস্টারমাইন্ড বলে উল্লেখ করেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই প্রেমিক অজিতকে দিয়ে স্বামীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করান মনুয়া।