ডেঙ্গু নিধনে ঢাকাকে কলকাতার পরামর্শ

ডেঙ্গু নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে এবার এক হলেন দুই বাংলার বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিরা। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিধনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা সিটি করপোরেশেন ও কলকাতা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। সেখানে বাংলাদেশের মানুষের ভাবনা, সরকারের উদ্যোগ, কীভাবে ডেঙ্গু নিধন করতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় কলকাতার বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ভিডিও কনফারেন্সে কলকাতার কর্মকর্তারা জানান, ধোঁয়া বা কীটনাশক দিয়ে ডেঙ্গু মশা নিধন করা যাবে না। তাতে দূষণ বাড়বে। মশার কিছু হবে না। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, কীভাবে ডেঙ্গু নিধন হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ডেঙ্গু নিধন করতে চাইলে তা সম্ভব হবে না। আর জনগণকে এটা বোঝাতে হবে যে, কীভাবে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সরকার ও জনগণের সবার সদিচ্ছা থাকলেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমবে। কলকাতায় শুধু বর্ষাকাল না, সারা বছর ধরেই মশার উৎস খুঁজে তা নিধন করা হয়।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সম্পর্কে কলকাতা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ড. স্বপন মুখার্জি বলেন, ‘ডাবের পানি, ফলের রস ছাড়াও ঘন ঘন পানি খেতে হবে। দেখতে হবে, ডেঙ্গু রোগী তিন ঘণ্টা পর পর স্বচ্ছ প্রস্রাব করছে কি না। তাহলে ধরে নিতে হবে, ওই রোগীর ডেঙ্গু ততটা প্রকট নয়।’
স্বপন মুখার্জি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে শীতকালেও কাজ করতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু বহনকারী মশা পানি ছাড়াও যেকোনো স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ডিম পাড়ে। ওই ডিম তিন বছর জীবিত থাকে। বর্ষার মৌসুম না থাকলেও স্যাঁতসেঁতে বাড়িতে পানির ছোঁয়া পেলে ডিম জেগে উঠবে। এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের প্রধান কাজ হলো, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মশার তেল বা লিকুইড তেল ব্যবহার করা। যাতে মশা না কামড়ায়। আর পানি জমতে দেওয়া যাবে না।’
জটিল ডেঙ্গু রোগী প্রসঙ্গে স্বপন মুখার্জি বলেন, ‘যে রোগীর গাঁটে গাঁটে ব্যথা করবে, জ্বর থাকবে, প্রেশার ২০ শতাংশ করে কমতে থাকবে, প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে যাবে, কোমরের কাছে ২০ থেকে ২২টি রক্তের ছোপ বা চিহ্ন দেখা যাবে, তাহলে সেই রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।’
কলকাতা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেন, ‘গত সপ্তাহে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল রহমান ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রটোকল সমস্যার কারণে যাওয়া হয়নি। তখন কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক ইসলাম যোগাযোগ করেন। পরে বাংলাদেশের মন্ত্রী কলকাতায় আসেন। তখন ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিয়ে আমাদের মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে ঠিক হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আইন তৈরি করা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কী পদ্ধতিতে করতে হবে, নাগরিকদের ভূমিকা কেমন হবে, তা আমরা শেয়ার করেছি।’
ভিডিও কনফারেন্সে কলকাতার বিশেষজ্ঞ দলের মধ্যে ছিলেন মুখ্য উপদেষ্টা ডক্টর তপন কুমার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. মনিরুল ইসলাম, উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. সুব্রত রায় চৌধুরী ও চিফ ডিরেক্টর কন্ট্রোল অফিসার ড. দেবাশীষ বিশ্বাস প্রমুখ। এ ছাড়া কলকাতায় বাংলাদেশের উপ দূতাবাস প্রধান তৌফিক হাসান ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।