কী অবস্থায় কাটছে কাশ্মীরিদের ঈদের আগের দিন

গত সপ্তাহ থেকে চলে আসা কারফিউ, নিয়ন্ত্রণ ও চলাফেরায় সামরিক বিধিনিষেধের মধ্যেই ঈদুল আজহা পার করতে যাচ্ছেন ভারতের জম্মু কাশ্মীরের মুসলমানরা। তবে আগামীকালের ঈদ উপলক্ষে কিছু জায়গায় নিয়ন্ত্রণের মাত্রা কমানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের ম্যাজিস্ট্রেট শহীদ চৌধুরী এক টুইটে দাবি করেছেন, আড়াইশর বেশি এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা খোলা রাখা হয়েছে। তবে কাশ্মীরিদের কাউকে কোথাও কোনো বাজারঘাটে বা শপিংমলে ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
ফলে কাশ্মীরি মুসলমানদের ঈদ প্রস্তুতি বা এবারের ঈদ নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসের জায়গা দখল করেছে নিজভূমির ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা। ফলে ঈদ প্রস্তুতি বলতে তেমন কিছুই নেই কাশ্মীরিদের জীবনে। যাদের স্বজনরা ভারতের অন্য রাজ্যে বা বিদেশে রয়েছেন, তাদের খোঁজ-খবর নিতেও লাইনে দাঁড়িয়ে লক টেলিফোনে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য শিথিল করা কারফিউ আজ রোববার আবার জারি হলো। সাতদিন ধরে রাজ্যে কারফিউ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে বরাবরের মতো সরকার এবং রাজ্য পুলিশ জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলে দাবি করে আসছে।
অথচ পুলিশ গাড়িতে করে ঘুরে এলাকায় লাউড স্পিকারে ঘোষণা করছে, সব মানুষ যেন বাড়ির ভেতরে থাকে, কোনোভাবেই বাইরে যেন না আসে। পথচারীদের তল্লাশি আরো বাড়ানো হয়েছে। দোকানদারদের বলা হয়, শাটার নামিয়ে দিতে।
শনিবার রাজ্য পুলিশ টুইট করে দাবি করে, ‘কোনো অবাঞ্ছিত ঘটনার খবর নেই, কেবল সামান্য পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ছাড়া। সেই ঘটনাকেও অঙ্কুরেই বিনাশ করা হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়েই।’
এর আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমকে জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশের নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।
রাহুলের এহেন দাবির কিছুক্ষণের মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশের পক্ষে টুইট করে দাবি করা হয়, পরিস্থিতি একেবারেই শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শনিবার দাবি করেন, গত কয়েকদিনে শ্রীনগর ও বারামুলায় কয়েকটি প্রতিবাদের ঘটনা ঘটলেও কোথাও ২০ জনের বেশি মানুষ একত্রিত হননি। কাশ্মীর উপত্যাকায় হাজার দশের মানুষ পথে নেমেছেন প্রতিবাদ প্রদর্শনে— এমন দাবিকে তিনি ‘মনগড়া ও অসত্য’ বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে বিবিসি জানিয়েছে, তাদের হাতে এমন ছবি ও ভিডিও এসেছে যাতে হাজার হাজার কাশ্মীরিকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিসহ প্রায় ৪০০ রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সপ্তাহের শুরুতেই বিজেপি সরকারের তরফে সংসদে বিল পেশ করা হয় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়ে তাকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব নিয়ে। সংসদের উভয় কক্ষেই তা পাস হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স। দলের দুই সাংসদ আকবর লোন ও হাসনাইন মাসুদি এই মামলা করেন। দলের বক্তব্য, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ ‘বেআইনি'।