আত্মহত্যার পর জানা গেল বৃদ্ধার নাম ছিল নাগরিকপঞ্জিতে!

ভারতের আসাম রাজ্যের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি গতকাল শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষ। তার মধ্যেই তালিকায় নাম নেই—লোকমুখে এমন কথা শুনে আত্মঘাতী হয়েছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধা কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই বৃদ্ধার পরিবারের সবারই নাম নাগরিকপঞ্জিতে রয়েছে। আত্মঘাতী নারীর নাম সায়েরা বেগম। তিনি উত্তর আসামের শোনিতপুর জেলার বাসিন্দা।
শোনিতপুর জেলার পুলিশ কর্মকর্তা মুকেশ আগরওয়াল বৃদ্ধ সায়েরা বেগমের আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, সায়েরা বেগমকে কুয়া থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, গতকাল নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন সায়েরা বেগম ও তাঁর পরিবার। সকালে নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশ পায়। এতে প্রায় ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এ সময় সায়েরা বেগম নিজের নাম তালিকায় আছে কি না, সেটা জানার জন্য মানুষের কাছে ছুটে যান। লোকজন জানায়, তার নাম তালিকায় নেই। এ কথা শুনেই সায়েরা নিজের বাড়ির কুয়ায় ঝাঁপ দেন।
আত্মঘাতী হওয়ার এক ঘণ্টা পর সায়েরার পরিবার জানতে পারে, তাঁদের সবার নামই নাগরিকপঞ্জিতে রয়েছে। শুধু গুজবের বশে সায়েরা আত্মহত্যা করেন। তবে এটাই প্রথম ঘটনা নয়। চলতি বছর জুন মাসে নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর থেকে প্রায় ৫০ জন আত্মঘাতী হয়েছেন বলে বেসরকারি সংস্থাগুলো দাবি করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি থেকে যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তার মধ্যে অনেক বিশিষ্ট মানুষও রয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের নাম। তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানাউল্লাহর নাম। তিনি একসময় কাশ্মীর-মণিপুরে ভারতীয় সেনার হয়ে লড়াই করেছিলেন।
হতাশায় সানাউল্লাহ বলেন, ‘৩০ বছর ধরে ভারতের হয়ে লড়াই করেছি। তার পরিবর্তে কী পেলাম আমি। তবে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমার আস্থা আছে। আমি আশা করছি, ন্যায়বিচার পাব।’
এদিকে আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের ‘বিদেশি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আবার তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবেও বিবেচিত হবেন না। তাহলে তাঁদের আসল পরিচয় কী হবে? এ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আসামে।