ছাতা মাথায় ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা!

বই-খাতা কিংবা কলম হাতে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা—এটিই বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত চিত্র। এখন অবশ্য মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের হাতে ল্যাপটপ-নোটপ্যাডও দেখা যায়। তবে ভারতের ঝাড়খন্ডের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এসব কথা নির্মম পরিহাসের মতোই লাগার কথা। কেননা, ওই রাজ্যের মুড়েঠাকুরা গ্রামের একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়মিতই ছাতা হাতে ক্লাস করতে হয়।
ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদন জানাচ্ছে এ রকমই দুঃখজনক এক সংবাদ।
একটি বিদ্যালয়ের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো ভীষণ জরুরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের অসংখ্য সরকারি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর অবস্থা জীর্ণ। তবে ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যালয়ের অবস্থা নিতান্তই শোচনীয়। তীব্র বৃষ্টিপাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে প্রায়ই ছাদ বেয়ে পানি পড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের ওপর। আর তাই মুড়েঠাকুরা গ্রামের ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাতে ছাতা ধরে রেখেই প্রতিদিন ক্লাস করে। ভাবছেন, কর্তৃপক্ষ কী করছে? তারা যে কিছুই করছে না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বিদ্যালয়ে ছাতা নিয়ে আসতে ও তা হাতে ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে তারা। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ মেরামতে তাদের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
Jharkhand: Students of a government school in Ghorabandha study under umbrellas due to leaking rooftop. Rati Kant Pradhan, Teacher says, "We turn off the electricity to avoid unfortunate incidents. I request the government to look into the matter and solve it." (06.09.19) pic.twitter.com/YigJMnOMcp
— ANI (@ANI) September 7, 2019
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রতিকান্ত প্রধান বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা শ্রেণিকক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। সমস্যাটির দিকে সুদৃষ্টি দিয়ে তা সমাধানের জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই।’
প্রতিবেদনে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে সাতটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। তিনটি বাদে বাকি সবকটির অবস্থাই জীর্ণ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৃষ্টির ফলে তাদের পড়াশোনাতেও ক্ষতি হচ্ছে।
‘বৃষ্টি হলেই আমাদের বই নষ্ট হয়ে যায়, এতে আমাদের খুব সমস্যা হয়,’ বলে ওই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। কল্পনা নামের এক ছাত্রী জানায়, ‘ছাদ ভেঙে যাওয়ায় আমরা ছাতা নিয়ে ক্লাসে আসি।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষক রতিকান্ত প্রধান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পড়া ১৭০ শিক্ষার্থী সরকারের কাছে তাদের নতুন ভবনে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে। একটি সরকারি বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা দুঃখজনক। হাতে কলম-পেনসিল থাকার পরিবর্তে তাদের ছাতা হাতে রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভালো অবকাঠামোর বদলে তাদের প্রতিদিন ছিদ্রবিহীন ছাদের জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কেন বাড়বে না? কেন অভিভাবকেরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন? আর কেনই বা তাদের কাছে মনে হবে যে শিক্ষা গ্রহণ প্রয়োজনীয়?