ভারতীয় বাহিনীকে ঢুকতে দেন না কাশ্মীরের যেখানকার তরুণরা

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের একটি এলাকা আনচার। ১৫ হাজারের মতো মানুষের বসবাস সেখানে। জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে গত দুই মাসের কড়াকড়ি কিছুটা কমানো হলেও আনচার থেকে কর্তৃপক্ষের খড়গ একদমই নামেনি। ভারতবিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভে কাশ্মীরের অন্য এলাকাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উত্তাল থাকে এই আনচার।
ভারতীয় পুলিশ যাতে না ঢুকতে পারে, সে জন্য এলাকাটির প্রবেশপথে গাছের গুঁড়ি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে এবং কাঁটাতার দিয়ে পাহারায় থাকেন আনচারের তরুণরা। মূল সড়কগুলোও খনন করে রেখেছেন তারা। কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনে আনচারে অভিযান ও নজরদারি বাড়িয়ে দেয় ভারতীয় বাহিনী। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আর এর থেকে পরিত্রাণ পেতে রাত নামলেই আনচারের তরুণরা মুখোশ পরে কেউ গাছের ডাল হাতে নিয়ে, কেউ বা পাথর ছুড়ে সক্রিয় থাকেন। আবার এদেরকে চা বানিয়ে খাওয়ান রাস্তার ধারের ঘরবসতির লোকজন।
ভারতীয় বাহিনী যাতে এলাকায় ঢুকে অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে না পারে সে জন্য এলাকার প্রবেশমুখের রাস্তা খনন করে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন শ্রীনগরের আনচার এলাকার তরুণরা। ছবি : রয়টার্স
গাছের ডাল হাতে ১৬ বছর বয়সী কাশ্মীরি কিশোর ফাজিল বলছিল, ‘পরিবারের লোকজনকে রক্ষার চিন্তা করে আমি রাতে বাইরে থাকি। এখানে ওরা (ভারতীয় বাহিনী) ঢুকলেই অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। এই যে রাতে বাইরে আছি, এতে আমার কোনো ভয় কাজ করে না।’
রুবিনা নামের এক নারী জানান, তাঁর ১৫ বছরের ছেলে জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে ভারতীয় বাহিনীর বুলেটের আঘাতে আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে রুবিনার ছেলে। এখনো ছেলের মাথায় কয়েক স্তর ব্যান্ডেজ থাকলেও তাকে হাসপাতালের বদলে বাসায় রেখেছেন রুবিনা। এর কারণ বলতে গিয়ে রুবিনা জানালেন, ছয়-সাতজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে ঘিরে রেখে ছেলেকে এলাকার বাইরে শহরের হাসপাতালে নিতে হয়, যাতে পুলিশ তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।
ভারতীয় বাহিনী যাতে এলাকায় ঢুকে অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে না পারে, সে জন্য এলাকার প্রবেশমুখে রাস্তায় তারের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে শ্রীনগরের আনচারে। ছবি : রয়টার্স
ভারতীয় বাহিনী যেমন এলাকাটিতে ঢুকতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জরুরি খাতের কোনো সরকারি সেবার বন্দোবস্ত সব বন্ধ। সরকারি স্কুল বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। বাধ্য হয়ে চার কলেজছাত্র মিলে তিন রুমের একটি স্কুল দিয়েছেন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য স্কুলটি চালু থাকে। তাতেই পড়াশোনা চালায় দুইশর বেশি ছাত্রছাত্রী।
ভারতীয় সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর থেকে বিক্ষোভ-সংঘাতের ভয়ে চার হাজারের বেশি কাশ্মীরি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৩০৭ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির ফলে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হারিয়েছে কাশ্মীর। এখন জম্মু-কাশ্মীরের জমি ও সম্পত্তি কিনতে পারবেন অন্য ভারতীয়রা।
তবে গত সাত সপ্তাহের ব্যবধানে হিমালয়ের এই উপত্যকায় কেন্দ্রীয় সরকারের আঁটসাঁট নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কমানো হয়েছে এবং আটক বেশ কিছু মানুষকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে টেলিফোন সংযোগ। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধস নেমেছে, তা কাটিয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ আপাতত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেখা যাচ্ছে না।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে রাখায় বাধ্য হয়ে স্কুল খুলেছেন কাশ্মীরের শ্রীনগরের আনচারের চার কলেজছাত্র। ছবি : রয়টার্স