বাংলাদেশের ইলিশ আসার আনন্দে মাতোয়ারা পশ্চিমবঙ্গবাসী

সাত বছরের অপেক্ষার অবসান। সেই ২০১২ সাল থেকে আজ ২০১৯—এই দীর্ঘ সাত বছর ভারতের মাটিতে আসেনি বাংলাদেশের ইলিশ। এবার বাংলাদেশের সেই ইলিশের স্বাদ পেতে চলেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গবাসী। অবশেষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ সরকারের শুভেচ্ছা হিসেবে ভারতে এলো পদ্মার ইলিশ মাছ। আর বাংলাদেশের ইলিশ আসার আনন্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ খুশিতে মাতোয়ারা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থেকে সেলেব দুনিয়া; ক্রীড়াজগৎ থেকে শুরু করে সংস্কৃতিজগৎ তথা ভোজনরসিক বাঙালির কাছে এবারের পূজায় পদ্মার ইলিশ যেন অনেকটাই উপরি পাওনা।
গত শনিবার থেকে বাংলাদেশের ইলিশের অপেক্ষায় পথ চেয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। বাংলাদেশ থেকে ৫০০ টন ইলিশের প্রথম চালান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এসে ঢুকল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান হিসেবে ১০০ টন ইলিশ এদিন সন্ধ্যায় ভারতে এসে পৌঁছায়। মোট পাঁচটি ট্রাকে করে ভারতে আসে বাংলাদেশের ইলিশ। যা আজ মঙ্গলবার সকালেই ঢুকে পড়বে কলকাতা ও সংলগ্ন বাজারগুলোতে। বাকি ইলিশ আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যে ঢুকবে বলে জানা গেছে।
ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের কাস্টমস থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রথম চালানে আসা ১০০ টন ইলিশ রাজ্যে ঢুকে পড়ায় উৎসাহ আর উদ্দীপনায় মেতেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। রাজ্যটির অধিকাংশ আমজনতার ধারণা, পূজার মৌসুমে বাঙালির পাতে বাংলাদেশের ইলিশ এসে পড়ায় এবার পূজার আবহটাই বদলে যেতে চলেছে। কবজি ডুবিয়ে এবার ইলিশের হরেক পদের সঙ্গে জমবে পূজার খাওয়া-দাওয়া।
জানা গেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০০ টাকা কেজি দরে এই ইলিশ বিক্রি হবে কলকাতা ও কলকাতাসংলগ্ন বাজারগুলোতে। যা ভারতীয় রুপিতে কেজিপ্রতি দাম পড়বে ৪৩০ রুপির কিছু বেশি। প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক দরে ছয় ডলার, যা শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশি টাকা হিসেবে কেজিপ্রতি দাম পড়বে ৫০০ টাকা। কলকাতা ও কলকাতাসংলগ্ন বাজারগুলোতে মূলত বাংলাদেশের ইলিশ ব্যাবসায়ীরা এই ইলিশ বিক্রি করবেন বলেও জানা গেছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এই ইলিশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ভারতকে শুভেচ্ছা উপহার পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কলকাতায় ইলিশ নিয়ে আসবেন। পরে কলকাতা ও কলকাতাসংলগ্ন বাজারে তা বিক্রি করবেন। মূলত কলকাতার বড় ও উল্লেখযোগ্য বাজারগুলোতেই এই বাংলাদেশি ইলিশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের পর থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। তার পর থেকে বৈধভাবে বাংলাদেশের ইলিশ আর পশ্চিমবঙ্গে আসেনি। এবার ফের বৈধভাবে বাংলাদেশের ইলিশ আসার খবরে স্বভাবতই খুশি এপারের ইলিশপ্রিয় মানুষ।
বাংলাদেশি ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে আসায় খুশি ব্যক্ত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ইলিশের আবেদন জানিয়ে আসছিলাম। এবারে ঠিক পূজার মৌসুমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপার বাংলার মানুষের জন্য পূজার শুভেচ্ছা হিসেবে ৫০০ টন ইলিশ পাঠানোয় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সেইসঙ্গে এবারের পূজায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা বাংলাদেশের ইলিশ খেতে পারবেন, সেটা আমাদের কাছে পূজায় অবশ্যই একটা বাড়তি পাওনা।’
পাশাপাশি বাংলাদেশের ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে আসায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইলিশ পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। পূজায় বাঙালি পেট পুরে ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। আমরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে এই ইলিশ পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা পূজার মৌসুমে বাংলাদেশি ইলিশ পেয়ে স্বভাবতই খুশি।’
এখন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ শুধু অপেক্ষার পালা, কখন বাজারে গিয়ে পদ্মার রুপালি মাছ তাঁরা বাড়িতে নিয়ে আসবেন।