পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ কোটি পাউন্ডের মামলা জিতল ভারতীয় রাজপরিবার

লন্ডনের একটি আদালতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ডের মামলায় অবশেষে জিতে গেল হায়দরাবাদের নিজাম (রাজা) পরিবার। আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, নিজামের উত্তরাধিকারীরাই ওই অর্থের হকদার।
ব্রিটিশ আদালতে পাকিস্তান সরকারের আবেদন ছিল ১০ লাখ পাউন্ডের। এই অঙ্কের অর্থ ১৯৪৮ সালে হায়দরাবাদের তৎকালীন নিজাম পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে নিরাপদে রাখার জন্য দিয়েছিলেন। ওই অর্থের দাবিদার ছিল ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ আদালত ভারতের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনস্টার ব্যাংকে গচ্ছিত ওই অর্থ এখন সুদে-আসলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ডে। এই মামলায় ভারত সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন হায়দরাবাদের তৎকালীন নিজাম মীর ওসমান আলি খানের উত্তরসূরি হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম মুকাররম জাহ ও তাঁর ছোট ভাই মুফাখখম জাহ। যার ফলে মুকাররম জাহ পরিবারকে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড ফেরত দিতে হবে পাকিস্তানকে।
ওই অর্থের মালিকানা দাবি করে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা দায়ের করেছিল পাকিস্তান সরকার। এই অর্থ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ১৯৪৮ সালে। দেশভাগের পরে হায়দরাবাদের সপ্তম নিজাম মীর ওসমান আলি খান ভারত বা পাকিস্তান কারো সঙ্গেই যোগ দিতে চাননি। মীর ওসমান আলি খান ১০ লাখ পাউন্ড নিরাপদে রাখার জন্য পাকিস্তানের হাইকমিশনার হাবিব ইব্রাহিম রহিমতুল্লার লন্ডন অ্যাকাউন্টে পাঠান। ভারত থেকে হায়দরাবাদকে নিরাপদ রাখার জন্য ওই অর্থ পাঠিয়েছিলেন মীর ওসমান আলি খান, যাতে ভারত হায়দরাবাদে না ঢুকতে পারে। তখন ভারত সরকারের অধীনে ছিল না হায়দরাবাদ। ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮ এ খবর জানিয়েছে।
কয়েক দিন পরেই নিজাম মীর ওসমান আলি খান দাবি করেন, তাঁর অনুমতি না নিয়েই ওই অর্থ পাঠানো হয়েছে। তাই ওই অর্থ ফেরত তিনি চান। কিন্তু ব্যাংক অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, জমাকৃত অর্থ মীর ওসমান আলি খানের নামে ছিল না। ১৯৫০ সালে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেন মীর ওসমান আলি খান। মামলাটি ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসে চলে যায়। এরপরেই প্রশ্ন ওঠে, ওই অর্থের মালিক কে? পাকিস্তান দাবি করে, তারাই ওই অর্থের মালিক।
২০১৩ সালে ওই অর্থের মালিকানা দাবি করে মামলা করে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানের দাবি, ওই অর্থ নিজাম মীর ওসমান আলি খান পাকিস্তানকে দিয়েছিলেন তাঁকে সরবরাহ করা অর্থের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। পকিস্তান এও দাবি করে, ওই অর্থ তাদের দেওয়া হয়েছিল ভারতের হাত থেকে হায়দরাবাদকে বাঁচানোর জন্য। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ খবর জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার মামলা জেতার পর নিজাম মুকাররম জাহের আইনজীবী পল হিউইট বলেন, ‘আদালত আজ (বুধবার) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে পাকিস্তান ওই অর্থের মালিক নয়। পাকিস্তানের কাছে ওই অর্থ কেবল গচ্ছিত রাখা হয়েছিল। অর্থের প্রকৃত মালিক হায়দরাবাদের নিজাম।’
পল হিউইট জানান, তিনি যখন শিশু ছিলেন, তখন এ মামলা শুরু হয়েছিল। আর এখন মামলাটি যখন শেষ হলো, বর্তমানে পল হিউইটের বয়স আশির কোঠায়।
ব্রিটিশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে পাকিস্তান। আর পাকিস্তান আপিল না করলে ওই অর্থ ভারত ও নিজামের পৌত্রদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
১৯৮০ সাল পর্যন্ত হায়দরাবাদের অষ্টম নিজাম মুকাররম জাহ ছিলেন ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। পরে একটি বিচ্ছেদ মামলায় সবকিছু খুইয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে মুকাররম জাহ তুরস্কের বাসিন্দা।