কলকাতায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে বাজল আজানের সুর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে বেজেছে আজান। কলকাতার বেলেঘাটার একটি পূজামণ্ডপে শোনা যায় আজানের ধ্বনি।
গত শুক্রবার মহাষষ্ঠীর দিন বেলেঘাটা ৩৩ পল্লী ক্লাবের পূজামণ্ডপে ওই ঘটনা ঘটে। ওই ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা পরেশ পাল। বিধানসভায় তিনি ওই এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
জানা যায়, আজানের ধ্বনি বাজানোর অভিযোগে ওই পূজা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ফুলবাগান থানায় অভিযোগ করেছেন কলকাতার নেতাজিনগর এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী শান্তনু সিংহ। অভিযোগপত্রে তিনি বলেছেন, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লী পূজা কমিটির সদস্যদের এই কাজ এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতি এবং রীতি ভঙ্গ করেছে। পরেশ পাল ছাড়াও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত সাহাসহ একাধিক শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
১৯তম বর্ষে কলকাতার বেলেঘাটা ৩৩ পল্লীর পূজার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘আমরা এক, কিন্তু একা নই’। প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মণ্ডপের মুখেই একটি বিশাল ছাতার তলায় একসঙ্গে রয়েছে মন্দির, মসজিদ ও গির্জা। এখানে দুর্গা প্রতিমার হাতেও কোনো অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়নি। আসলে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরাই এবারের মূল লক্ষ্য এই ক্লাবের পূজা উদ্যোক্তাদের। আর সেই সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরতেই দুর্গাপূজার মণ্ডপ থেকে বাজানো হয়েছিল আজানের সুর। তাতেই শুরু হয় বিতর্ক।
হিন্দু দেব-দেবীর পূজামণ্ডপে কেন আজান বাজানো হবে, এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায়ও। এই বিষয়ে আইনজীবী শান্তনু সিংহ বলেন, ‘দুর্গাপূজার মণ্ডপে হিন্দুদের দুর্গা প্রতিমার মাথার ওপর থাকে মহাদেবের ছবি। দুর্গা প্রতিমার পাশে থাকে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর প্রতিমা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের আরাধনা করে থাকেন। অথচ মাইকে বাজানো হচ্ছে আজানের সুর। এটা কীভাবে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ভাবনার নজির হতে পারে?’
৩৩ পল্লী পূজা কমিটির সদস্যদের জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শান্তনু বলেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মকর্তারা আমাকে ঘটনাটি জানান। তাঁরা আমাকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। আমি দেখে অবাক হয়ে যাই। তারপর থানায় এফআইআর দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পুলিশ আমাকে কোনো এফআইআর নম্বর দেয়নি। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমি বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হব।’
অন্যদিকে ৩৩ পল্লী পূজা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল বলেন, ‘বিজেপি, আরএসএস বাংলার সংস্কৃতি জানে না। এখানে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মুসলিম রীতি, খ্রিস্টান রীতি সব পালন করতেন। যে দুর্গা, সেই শিব, আর সেই আল্লাহ। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী নিজেও মনে করতেন ঈশ্বর, আল্লাহ একই শক্তির আলাদা নাম। কিন্তু বিজেপি, আরএসএস এখানে ধর্মীয় বিভাজন করতে চাইছে।’
পরেশ পাল বলেন, ‘এবারের পূজায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তুলে ধরতেই আজানের ধ্বনি বাজানো হয়েছে। এই ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’