কাশ্মীরে কাউন্সিল চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৯৮.৩ শতাংশ

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে গতকাল বৃহস্পতিবার হয়ে গেল স্থানীয় সরকার সংস্থা ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (বিডিসি) চেয়ারম্যান নির্বাচনের ভোট। স্থানীয় বড় বড় দল তাদের নেতারা কারাবন্দি থাকায় এই নির্বাচন বয়কট করেছে। দলগুলোর ধারণা, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি দলীয় প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পাবে। এটি আরো নিশ্চিত হয়েছে জাতীয় কংগ্রেসের ভোট বয়কটের মধ্য দিয়ে।
স্থানীয় প্রধান দুই দল জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মতো দলও এই নির্বাচন বয়কট করেছে। এই বয়কটের মাঝেই ৯৮.৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কয়েকটি গ্রাম মিলে হয় একটি কাউন্সিল। এমন ৩১০টি পরিষদে এক হাজারের মতো প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। এগুলোর ২৫টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনটি অনেকটা বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো। আর এই হাজারখানেক প্রার্থীর বেশিরভাগই প্রধান শহর শ্রীনগরের হোটেলগুলোতে কয়েক মাস ধরে অবস্থান নিয়ে থাকছেন। বিদ্রোহীদের হামলার টার্গেট হওয়া থেকে বাঁচতে হোটেলে উঠেছেন এসব প্রার্থী।
গত আগস্টে ভারতের পার্লামেন্টে আইন পাস করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সে সময় থেকে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিসহ ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে কাশ্মীরিদের দৈনন্দিন জীবনে। এর মধ্যে নির্বাচনে সাড়া পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। তেমনটিই ঘটেছে।
ফলাফলে দেখা যায়, বিজেপি ৮১টি পরিষদে জিতেছে, কংগ্রেস পেয়েছে একটি, জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল প্যানথারস পার্টি আটটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন ২১৭টি আসনে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র কুমার তাঁর টুইটারে ফলাফলের এই তথ্য প্রকাশ করেন। ৯৮.৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন কার্যালয় দাবি করেছে।
গত ডিসেম্বরে কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের ভোটেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ২১ হাজার ২০৮টির মধ্যে ৬০ শতাংশ গ্রাম সদস্য আসনে কোনো প্রার্থীই ছিলেন না। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।
তৃণমূলের জনগণের কাজে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ভার থাকে এই পরিষদের হাতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পণ্ডিতদের মতে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটির অনেক কদর থাকলেও জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রহণযোগ্যতার কারণে এটি সেখানে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূর আহমেদ বলেন, ‘যখন সিংহভাগ মানুষ তাদের মৌলিক স্বাধীনতা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিয়ে চিন্তিত, তখন এমন নির্বাচন কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কিছুই নয়।’
এই কড়াকড়ির মধ্যেও ভোট সম্পন্ন করার বিষয়টিকে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির সমর্থনে জম্মু-কাশ্মীরে একটি অভিজাত রাজনৈতিক মহল তৈরির সুযোগ হিসেবে দেখছেন কাশ্মীরি তরুণরা। বার্তা সংস্থা এপির কাছে এমনটি বলেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামের এক কাশ্মীরি কলেজ শিক্ষক।