সেই কফি হাউসে বাংলা নয়, বলতে হবে হিন্দি!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কফি হাউসে বাংলায় কথা বলা যাবে না, কথা বলতে হবে হিন্দিতে! গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক তরুণীর পোস্ট নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস থেকে বলে দেওয়া হয়েছে সেখানে বাংলায় কথা বলা যাবে না। এখন থেকে শুধু হিন্দি বলতে হবে।
এ ঘটনায় কফি হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেন কিছু মানুষ। তাতে যোগ দেয় বাংলা ভাষার প্রচার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনও।
জানা গেছে, ফেসবুকে পোস্ট করা ওই তরুণীর নাম ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী। গত বুধবার বিকেলে তাঁরা তিন বন্ধু কফি হাউসে গিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়া নিয়ে কফি হাউসের এক কর্মীর সঙ্গে তাঁদের বিবাদের শুরু।
ইন্দ্রাণী বলেন, ‘সপ্তাহে অন্তত এক দিন আমরা কফি হাউসে যাই। আগেও বহুবার মোবাইলে চার্জ দিয়েছি, সমস্যা হয়নি। কিন্তু বুধবার আমাদের বলে দেওয়া হয় চার্জ দেওয়া যাবে না। জানতে চেয়েছিলাম কেন যাবে না। বলা হয়, মালিকের সঙ্গে কথা বলুন। অথচ আমরা জানি, কফি হাউসের মালিক বলে কেউ নেই। একটি সমবায় এই কফি হাউস চালায়।’
তরুণীর দাবি, ওই কথিত মালিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলে দেন, হিন্দিতে কথা বলতে হবে। কারণ, তিনি বাংলা বোঝেন না। ফের হিন্দিতে চার্জ দেওয়ার অনুরোধ জানাতে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘হামনে এক বার বোল দিয়া, নেহি হোগা। আব নিকলো রুমসে। ইস রুমমে বাংলা নেহি চলেগা।’
কণ্ঠশিল্পী মান্না দের প্রসঙ্গ তুলে ইন্দ্রাণীরা বলেন, ‘তাঁর গান শুনেই নতুন প্রজন্ম কফি হাউস চিনেছে। তিনিও তো বাঙালিই! ওই মালিক বলেন, মান্না দে কৌন হ্যায়? যে লোকটা আমাদের ওই মালিকের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি উত্তরে বলেন, জানি না। অত বকব না। এখানে বাংলা বলা যাবে না, বেরিয়ে বাংলা বলুন।’
এদিকে স্থানীয় অধিকার কর্মী দীপাঞ্জন অনন্যা বসু বলেন, ‘কফি হাউস বাঙালির চেতনায় একটা বিশেষ জায়গা নিয়ে রয়েছে। সেখানে বাংলায় কথা বলতে কেউ নিষেধ করছেন, এটা ভাবাই যায় না’!
তবে কফি হাউস পরিচালন সমিতির সম্পাদক তপন পাহাড়ি বললেন, ‘আমাদের কোনো কর্মী এমন বলতে পারেন বলে বিশ্বাস হচ্ছে না। তবু যদি বলেও থাকেন, যে তরুণীকে বলা হয়েছে তিনি কফি হাউসের পরিচালন সমিতিতে অভিযোগ জানাতে পারতেন।’
তপন বলেন, ‘তার বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবে পোস্ট করায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আমরা আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছি।’
কিন্তু তরুণীর পাল্টা দাবি, যে ব্যবহার করা হয়েছে সেটাই সোশ্যাল সাইটে জানানো হয়েছে। এটাই তাঁদের প্রতিবাদ।
প্রসঙ্গত, ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মান্না দের কালজয়ী গান ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই। কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই।’
কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের আড্ডাই উঠে এসেছে এই গানে। গানটির মাধ্যমে দেশ বিদেশের দর্শনার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠে এই কফি হাউসটি।